গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখের দৃষ্টি হারানো গৌরীপুরের মো. আব্দুল্লাহ বাবুর ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৮৪জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাবু’র বাবা মো. আব্দুল বারিক শেখ বাদী হয়ে ঢাকা চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রবিবার (৩ নভেম্বর) এ মামলা দায়ের করেন। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া গ্রামের মৃত ইজ্জত আলীর পুত্র।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন- সাবেক মহাপুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক র্যাব পরিচালক মো. খোরশেদ হোসেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, ঢাকা দক্ষিন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিহউদ্দিন মহি, ঢাকার দক্ষিন মহানগরের যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, টুটুল, রফিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান সজল, মইন উদ্দিন, রাগিব আহসান (সিটি টোল), সজিব হাসান, নুর আহসান ওরওফে বাবুল সিটি টোল, শাহাদত আহসান ছোট বাবু, মো. মাহিম প্রদীপ, বিপুল আহসান, শরিফ আহসান, জগৎ, মো. মোস্তফা, সালাম, আবু হানিফ সেতু, হাসেম, রোকনুজ্জামান রোকন, মো. আশিকুল ইসলাম খোকন, মেহেদী হাসান, সাদ্দাম হোসেন, লাবলু, আবুল হোসেন, রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ, হুমায়ুইন কবির, আবুল কালাম আজাদ, গাজী শামীম, গাজী সুমন, মনির (কালা মনির), মো. মাহমুদ, জসিম মিয়া, রফিকুল ইসলাম মঞ্জু, মো. সজল শেখ, আনোয়ার মিয়া, মো. রমজান আলী, বাহার, পারভেজ, জমির আলী, গৌরব, আলামিন, মো. রাজিব, আজিজুল রহমান উজ্জল, আব্দুল বাসেত বাচ্চু, সিরাজ, মো. আজিবর রহমান, দেওয়ান আতিকুর রহমান আখি, দেওয়ান রাকিবুর রহমান রাকি, মো. শামীম হোসেন, আলমগীর হোসেন, কাউসার প্রধান, আলী হোসেন, মো. বাদল মুনসী, বাদশা শেখ কসাই, মো. ইমন, মো. মাসুদ পারভেজ, নুর আলম, আফসার আলি বিশ্বাস, মাসুম, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, মজিবর, হাজী সুলতান মিয়া, রোমন মাতবর, কালাম, সঞ্জয় দাশ, রকি, সেন্টু, মো. আরশেদ আলী, রাজিব খান, আব্দুল কাদির, মো. চান মিয়া, আশলতা বৈদ্য, নাসির উদ্দিন বাদল, আবু বকর সিদ্দিক আবু, মানিক মিয়া।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে মিছিল করার সময় পুলিশের গুলিতে চোখ, মুখ-নাকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেকের পুত্র মো. আব্দুল্লাহ বাবু। গুলিতে তাঁর একটি চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। অপর চোখেও বর্তমানে সে ঝাপসা দেখছে।
আব্দুল্লাহ বাবু জানান, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে যাত্রাবড়ি গোলাপবাগ এলাকায় ছুটে যায় সে। তখন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত পুরো এলাকা। সে ছিল মিছিলের সম্মুখভাগে। হঠাৎ একটি বাসার ভিতর থেকে বেড়িয়ে এসেই পুলিশ সরাসরি রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে চোখ, মুখ-নাকে লেগে গুরুতর আহত হয় সে। গুলিতে বাবুর বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সে সময় ডানচোখেও গুলির আঘাত লাগে। সেই চোখটিও এখন ঝাপসা হয়ে আসছে। দূরের জিনিস দেখতে পায় না। তাকে চিকিৎসার জন্য জামায়তে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১০হাজার টাকা ও আরেকটি সংগঠন ১লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতা করেছে। তবে চোখের চিকিৎসা আরও চালিয়ে যেতে হবে।
আব্দুল্লাহ বাবু থাকেন এখন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইকুরিয়া এলাকায়। সে পেশায় একজন ড্রাইভার ছিল। তার আয়ে এক সন্তানকে নিয়ে তার সংসার আর পিতা আব্দুল বারেক-মাতা সালমা বেগমকে আগলে রাখতেন। তাঁর বাবা ৩৯নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০২৩সনে একটি রাজনৈতিক মামলায় তার বাবাকে জেলহাজতেও যেতে হয়েছিলো। বাবুও বাবার সঙ্গে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সাংগঠনিক কর্মসূচীতেও সক্রিয় ছিল সে। একদিকে বেড়েছে খরচ, অপরদিকে বন্ধ হয়ে গেছে সংসারের আয় উপার্জক্ষম বাবু’র উপার্জন। সন্তানের সুচিকিৎসা ও সংসারের হাল ধরতে আবারও গাড়ির স্ট্রিয়ারিং ধরেছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা আব্দুল বারেক। সংসার আর বাবু’র সুচিকিৎসার জন্য দ্বিগবেদিক ছুটছেন পিতা আব্দুল বারেক।
আব্দুল বারেক বলেন, আমার সন্তানের উপর এভাবে যারা গুলি ছোঁড়েছে, যারা হামলা করেছে। আমি তাদের বিচার চাই। তিনি আরও বলেন, আমার সন্তান তো আর কখনও গাড়ি চালাতে পারবে না। তার তো একটি কর্মসংস্থান প্রয়োজন। তা না হলে স্ত্রী-সন্তানের ভরণ-পোশন চলবে কেমনে, কে নিবে সংসারের দায়িত্ব?
আব্দুল্লাহ বাবু বলেন, আমরা একটি স্বপ্ন নিয়ে স্লোগান ধরেছিলাম। সেই স্বপ্ন পূরণে একটি-দুটি চোখ কেনো, জীবন চলে গেলেও ফিরে আসতাম না। ঝাপসা চোখেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন দেখেছি, এ আমার মহানন্দ।