রফিকুল ইসলাম রনি, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি: হিমালয়ের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে বরফ রাজ্য। উঁচু উঁচু সব পর্বত। এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে, অন্নপূর্ণাসহ আরও কত জানা-অজানা চূড়া। এমনকি এই হিমালয়েই রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান। প্রতি বছর সৌন্দর্যের টানে হিমালয় দেখতে ছুটে যান হাজারো ভ্রমণ পিপাসু। এর মধ্যে কিছু মানুষ পর্বতচূড়ার নেশায় পড়েন। এ এক প্রবল নেশা, যা মৃত্যুকেও হার মানায়।
হিমালয়ের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা ওই চূড়াগুলো স্পর্শ করার নেশাই মানুষকে পর্বতারোহী করে তুলে। তেমনই এক পর্বতারোহী চলনবিলের চাটমোহরের সন্তান তরুণ আহসানুজ্জামান তৌকির (২৮)। পাবনার চাটমোহর পৌর সদরে বেড়ে উঠা এই তরুণ পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও পর্বত আরোহণে তার রয়েছে বেশ কিছু সফলতা।
পর্বতারোহী তৌকির এর পিতা আকরাম হোসেন সাবু বলেন, তৌকির হিমালয়ের ছয় হাজার মিটার উচ্চতায় শুধু লাল-সবুজের মানচিত্রকে নয়, সে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। এ বছর তৌকির গত ১৩ অক্টোবর পর্বতের ৬১১৯ মিটারের লবুচে, ১৮ অক্টোবর ৬১৬৫ মিটারের আইল্যান্ড এবং ৩০ অক্টোবর ৬৪৭৬ মিটারের মেরা পিক এর শিখর স্পর্শ করে প্রথমবারের মত ইতিহাস গড়েছে। একই সাথে এ তিনটি পর্বতের চূড়া বাংলাদেশের কেউ স্পর্শ করে নাই।
উল্লেখ্য, তৌকির গত ২০২২ সালে হিমালয়ের এভারেস্ট, খুম্বু রিজিওনের ছয় হাজার ১৬৫ মিটার আইল্যান্ড পিকের অভিযান সফলভাবে সমাপ্ত করেন। এর মাধ্যমে তিনি ছয় হাজার মিটার পর্বতারোহী ক্লাবের সদস্য হন।
পর্বতারোহী স্বপবাজ এই তরুণ ২০২৩ সালের ১৯ ও ২১ অক্টোবর তিনি দুটি পর্বতচূড়া আরোহণ করেন। ১৯ অক্টোবর খুম্বু রিজিওনের পাঁচ হাজার ৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন। ২১ অক্টোবর ছয় হাজার ১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন তৌকির।
গত বছর তার ঝুলিতে আরও একটি অর্জন যুক্ত হয়েছে। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কমার্শিয়াল এক্সপেডিশনের দলনেতা হয়ে একটি সফল ছয় হাজার মিটার অভিযান সম্পন্ন করেছিলেন।
তৌকিরের পিতা আরো বলেন, হিমালয়ের সকল পর্বতের অভিযানই কষ্টকর, প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঝুকিপূর্ণ। আগামী বছর তৌকির হিমালয়ের অন্যতম কঠিন পর্বত মাউন্ট আমা দাবালাম অভিযানে যাবেন। এর জন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই অভিযান আরও সহজ হবে। ২০২৫ সালে মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে তৌকিরের। বর্তমানে তৌকির নেপালে অবস্থান করছেন। সে এ মাসেই দেশে ফিরবেন।
চিত্রগৃহ চাটমোহরের প্রতিষ্ঠাতা জেমান আসাদ বলেন, সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব এটাই যে, তৌকির কোন শেরপা বা গাইডের সাপোর্ট ছাড়া একা লবুচে পিক এর শিখর স্পর্শ করেছে। জানামতে লবুচে পিকে এর আগে কোন বাংলাদেশী গাইড ছাড়া একা অভিযান করে নাই। এটাও একটা রেকর্ড ছিল। নিশ্চই আগামীতে সে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শিখরেও পা রাখবে। তখন নিশ্চই আমরা আরো গর্বিত হবো, গর্বিত হবে দেশ।
চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার আইসিটি (সিনিয়র) শিক্ষক মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, স্বপ্নবাজ এই তরুণ আমাদের চাটমোহরের সন্তান। তার এ সফলতায় এলাকা সহ দেশবাসী গর্বিত।
আহসানুজ্জামান তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু ও সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতির ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে তৌকির ছোট। তিনি চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ও অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি সম্পন্ন করেন।