এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাট জেলায় আলুর বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে কৃষক ও ভোক্তারা চরম উদ্বিগ্ন। আলুর বাজারে এমন অস্থিতিশীলতা কালাই উপজেলা কৃষকদের জন্যেও চাপ বাড়িয়েছে। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং কঠোর মনিটরিং ছাড়া এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মোলামগাড়ী হাটের কৃষক আফজাল হোসেনের মতে,“ হিমাগারে থাকা আলু এখন বড় ব্যবসায়ীদের দখলে। কৃষকের আলু তেমন নেই হিমাগারে। প্রশাসনের লোকজন আসলে মজুতদাররা উধাও হয়ে যায়, ফলে বেচাকেনা বন্ধ থাকে। আবার প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে তারা পুনরায় সক্রিয় হয়।”
জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন সম্প্রতি হিমাগারগুলোতে অভিযান শুরু করেছেন। তবে অভিযানের সময়ই চতুর মজুতদাররা লুকিয়ে বেচাকেনা বন্ধ করে রাখছেন। জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে বাজারের দামের নিয়ন্ত্রণ নেই। কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে আলু বিক্রি করেছিলেন মাত্র ১৪-১৫ টাকা কেজি দরে, যা বর্তমানে হিমাগার গেটে পাইকারি পর্যায়ে ৬০-৬৫ টাকায় এবং খুচরা বাজারে ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাত্র চার সপ্তাহ আগেও এই আলুর দাম ছিল পাইকারি পর্যায়ে ৫০-৫৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর, "সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অস্থির আলুর বাজার, ১৫ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়’ শিরোনামে কালের কন্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশের পর, প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। নতুন যোগদানকারী জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরীর নেতৃত্বে গত ৬ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সাথে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয় এবং অভিযানে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ৭ নভেম্বর থেকে জোরেশোরে তদারকি শুরু হয়। জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের ভাষ্যমতে, নিয়মিত তদারকির ফলে বাজার দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণ আলু আছে, তা মজুতদারদের হাতে জিম্মি বলে জানিয়েছেন কমিশন ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান।
পূর্বপাড়ার বাসিন্দা আলম মিয়ার মতো অনেক কৃষক মৌসুমের শুরুতে কম দামে আলু বিক্রি করলেও এখন তাদের উচ্চ মূল্যে কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, “ দুই সপ্তাহ আগেও ৬০ টাকায় কেনা আলু এখন ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কৃষকদের পরিস্থিতি সত্যিই করুণ।”
কালাইয়ের শিমুলতলী আরবি হিমাগারের সহকরী ব্যবস্থাপক আব্দুল লতিফ দাবি করেছেন, এখন তাদের মজুদ খুবই সীমিত। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।
জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবুও যদি কেউ কারসাজিতে জড়িত থাকে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।