মামুন মোল্লা,চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটির জনৈক্য ব্যক্তির পান বরজে উদ্ধার হওয়া অর্ধগলিত তরুনীর লাশ উদ্ধারের পরপরই দুই আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশ।
জানা গেছে, নিহত তরুনী আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়ীয়া ইউনিয়নের ভাংবাড়ীয়া গ্রামের মৃত ফুয়াজ আলীর ছোট মেয়ে খালেদা আক্তার মুন্নী (১৯)। তার মা আহারন নেছা অন্যের বাড়ীতে কাজ করে ছোট মেয়ে মুন্নীকে নিয়ে টিনের একটি ঝুপড়ি ঘড়ে বসবাস করে আসছিলেন । দেড় বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে গৌরি হাদের মজিদের ছেলে আসিফের সাথে তার বিয়ে হয়।
৬ মাস পার না হতেই চারিত্রিক সমস্যার কারনে সংসার ভেঙ্গে যায় মুন্নীর। তালাকপ্রাপ্ত হওয়ায় সে স্থানীয় একটি বিউটি পার্লারে কাজ করার পাশাপশি লাস্যময়ী সুন্দর চেহারাকে কাজে লাগিয়ে খারাপ পথে পা বাড়ায়। উঠতি বয়সী তরুনদের সাথে অর্থের বিনিময়ে শুরু করে দেহব্যবসা।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর (শনিবার) দুপুর আনুমানিক ১২ টায় হাটবোয়ালিয়া বাজারে কেনাকাটা করার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়। ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টায় তার মা’কে ফোন করে জানায় কেনাকাটা করতে রাত হয়েছে আলমডাঙ্গা খালার বাসায় থাকবে। পরবর্তীতে গত ১৪ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮ টায় অজ্ঞাতনামা তরুনীর অর্ধগলিত(পোকা ধরে গেছে) লাশ উদ্ধার পূর্বক ভিকটিমের পরিবারকে সংবাদ দিলে ভিকটিমের পরিবার ঘটনাস্থলে পৌছে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ট্যাটু দেখে লাশটি ভিকটিম খালেদা আক্তার মুন্নি’র মর্মে সনাক্ত করে। বর্ণিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার মামলা নং-১১ তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার জনাব খন্দকার গোলাম মওলা,বিপিএম-সেবা মহোদয় তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এরই প্রক্ষিতে দিকনির্দেশনায় জনাব রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ)(পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত),অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্), চুয়াডাঙ্গা এবং জনাব আনিসুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল), চুয়াডাঙ্গার নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষে মাঠে নামেন।
অবশেষে ডিবি, চুয়াডাঙ্গার চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে ১৫ নভেম্বর শুক্রবার আটটায় এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীদ্বয়কে নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, এ ঘটনায় আটককৃত আসামী হাজরাহাটির শেখপাড়ার টোকন আলীর ছেলে মানিক আলী ওরফে মানিক মুন্সি(২২) জানায় গত ৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ আসামী ও তার বন্ধুরা বড়গাংনীতে ভিকটিমের সাথে টাকার বিনিময়ে অনৈতিক সম্পর্ক করার জন্য নিয়ে আসলে ভিকটিম স্থানীয়দের সহযোগীতায় ব্লাকমেইল করে বিশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। অতঃপর আসামী মানিক মুন্সি ভিকটিমের উপর রাগের বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে।
আসামী মানিক মুন্সি গত ৯ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ বিকালে ফোনকলের মাধ্যমে আসামী মানিক মুন্সির সাথে ভিকটিম সারারাত বিশ হাজার টাকার বিনিময় অনৈতিক কাজ করতে সম্মত হয়। সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ টায় ভিকটিম মুন্নি সদর থানাধীন বোয়ালমারি নীলমনিগঞ্জ পিটিআই মোড়ে পৌঁছালে আসামী মানিক মুন্সি তার অপর সহযোগী আসামী একই এলাকার পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপন(১৯) এর মোটরসাইকেল এ নিয়ে আসতে বলে।
অপর আসামী একই এলাকার মইদুল ইসলামের ছেলে পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপন পিটিআই মোড় থেকে ভিকটিমকে রিসিভ করে বোয়ালমারি শ্বশানের রাস্তার ফাঁকা জায়গায় আসামী মানিক মুন্সির নিকট নিয়ে আসে। আসামীদ্বয় পানবরজের পিছনে জঙ্গলে ভিকটিমের সাথে পালাক্রমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। আসামী পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপন ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে আসামী মানিক মুন্সি একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে ভিকটিমকে পাঁচ হাজার টাকা দিলে ভিকটিম টাকা নিতে অসম্মতি প্রকাশ করে এবং চিৎকার করলে ভিকটিমের গলা চেপে ধরলে উপুড় হয়ে পড়ে গেলে পিঠের উপর বসে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওড়না দিয়ে হাত বেধেঁ জঙ্গলের ফেলে রেখে ভিকটিমের শপিং ব্যাগ ও জুতা নদীতে ফেলে দেয়। ঘটনার বিষয়ে আসামীদ্বয় বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।