হাসান শাহরিয়ার পল্লব, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর পত্নীতলায় ব্যবসায়ী সুমন হত্যার খুনিদের ফাঁসির দাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নজিপুর বাসস্ট্যান্ড গোল চত্বরে ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন।
এ সময় অন্যান্যদের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আলীমুজ্জামান মিলন, পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ মোঃ এনায়েতুর রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পত্নীতলার মারুফ মোস্তফা প্রমূখ। সমাবেশে সুমন হত্যার খুনীদের ফাঁসির দাবি জানানো হয়। হত্যার সাথে জড়িত খুনিদের দ্রুত আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
সুমন নজিপুর মসজিদ মার্কেটের সুমন কম্পিউটার এ্যন্ড ফটোস্ট্যাট দোকানের স্বত্বাধিকারী এবং মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের উত্তর বিলছাড়া (চকপাড়া) গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দীনের ছেলে। গত রবিবার (১৭ নভেম্বর) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ী ফেরার পথে সুমন কে খুন করা হয়েছে অভিযোগে সুমনের বোন মৌসুমি বাদী হয়ে বুলবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৯/১০ জনকে আসামি করে সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে পত্নীতলা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সুমন হোসেন ও বুলবুল ইসলামের মধ্যে টাকা পয়সা নিয়ে পূর্ব থেকেই বিরোধ ছিল। বুলবুলের কাছে সুমন সুদের উপর ৭০ হাজার টাকা ধার করেন। ১হাজার টাকায় প্রতিদিন ২০ টাকা হিসেবে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ফাঁকা স্ট্যাম্প ও চেকের ভয় দেখিয়ে মোট ৭ লক্ষ টাকা আদায় করে বুলবুল ইসলাম। এরপরও সুমনের কাছে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মামলা হামলার ভয়ভীতি এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন। সুমন মান সম্মানের ভয়ে তার চাহিদা মত টাকা দিতে সম্মতি হয়। ঘটনার দিন বুলবুল কে টাকা দেওয়ার জন্য সুমন মহাদেবপুর থেকে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে সিএনজি যোগে নাদৌড় মোড়ে নামলে আগে থেকে আড়ালে থাকা কিছু লোক সুমনকে অনুসরণ করেন। সুমন বাঁচার তাগিদে পালিয়ে একটি জঙ্গলে লুকিয় তার ফেসবুক আইডিতে লাইভ করে ঘটনার বিবরণ দেন। পরে তার চাচাত ভাই রুবেলের মোবাইলের মেসেঞ্জারে ফোন দিয়ে বলে নাদৌড় রাস্তার উপর আসামী সহ ৯/১০ জন আসামি টাকার ব্যাগ নেওয়ার জন্য তাকে খোঁজাখুঁজি করছেন। তৎক্ষণাৎ রুবেল সহ কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়ে দেখন নাদৌড় সড়কের নাপিত পকরা থেকে ৩শ গজ পূর্বদিকে রাস্তার পাশে কাঠাল গাছে সুমন ঝুলে আছে। নিচে একটি চাকু পরে আছে। স্বাক্ষীগণ তাকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সুমনের বোন মৌসুমি বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই, আমার ভাইয়ের খুনির ফাঁসি চাই।
ছাত্র-জনতার দাবির সাথে একাট্টা প্রকাশ করে পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ মোঃ এনায়েতুর রহমান বলেন, এটি একটি আলোচিত ঘটনা। এটি নজিপুর বা পত্নীতলা নয় সারা দেশে আলোচিত ঘটনা, এ ঘটনায় আপনাদের সাথে আমরাও মর্মাহত। যে মারা গিয়েছেন তার বোন থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন, সেই এজাহারের প্রেক্ষিতে একটি নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু করেছি। এই ঘটনার সাথে যারা জরিত আছে তাদের খুব দ্রুত আইনের আওতায় আনবো।
পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলীমুজ্জামান মিলন বলেন, আমি জেলা প্রশাসককে বলবো জেলাতে যে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার মনিটরিং সেল আছে সেই সেল থেকে যেন এই মামলা মনিটরিং করা হয়। আর একটা বিষয়, এখানে যে সুদের কারবার, যে কারনে এ ঘটনাগুলো ঘটছে, সমবায়ের যতগুলো কোওপারেটিভ সোসাইটি আছে সবগুলো দেখবো, তাদের কার্যক্রম সঠিক আছে কিনা। আইনের ব্যাতয় ঘটলে ব্যবস্থা নিবো। আমরাও সঠিক বিচার চাই।