সজিবুল ইসলাম, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় বস্তায় আদা চাষ করে সফল হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা মুর্শিদা বেগম (৫৩)। পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয় করছেন তিনি। উৎপাদন খরচ বাদেও কয়েক গুণ লাভ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অন্য চাষিরাও। শুধু মুর্শিদায় না, তার মত এই উপজেলায় আরো অনন্ত ৮৭ জন এবছর বস্তায় আদা চাষ করেছেন।
কৃষি বিভাগ বলছেন, আধুনিক সময়ে বিভিন্ন পন্থায় কৃষকরা বিভিন্ন আবাদে ঝুঁকেছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলে বস্তায় আদা চাষ দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সরেজমিনে উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় সারি সারি বস্তায় আদা রোপণ করা হয়েছে৷সবুজের সমারোহে পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। মাঝে মাঝে লাগানো হয়েছে কয়েকটি ড্রাগনের গাছ, পাশে করা হয়েছে কেঁচো কম্পোস্ট সারের স্তুপ।
মুর্শিদা বেগম জানান, বাড়ির আঙ্গিনা ছায়াযুক্ত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। পরে কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রাথমিক ভাবে ৪২৫টি বস্তায় আদার চাষ শুরু করেছেন। নিজের বাড়িতে উৎপাদিত জৈব ব্যবহার করায় তেমন খরচ হয় নি। শুধু মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে অনলাইন থেকে বীজ কিনেছিলেন। এ থেকে প্রায় ১ লাখ টাকার আদা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
আরেক আদা চাষি বালিতিতা ইসলামপুর গ্রামের খাইরুল ইসলাম। তিনি জানান, অন্যান্য ফসল চাষের খরচের তুলনায় বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। রোগবালাই, প্রাকৃতিক ঝুঁকি ও পরিচর্যা খরচও কম। আমি বাড়ির আঙ্গিনায় ৭৫০টি বস্তায় আদা চাষ করেছি। আশা করছি, যে খরচ হয়েছে, তার চেয়ে তিন গুণ বেশি লাভ হবে। আগামী বছরে আরও বড় পরিসরে আদা চাষ করবেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর উপজেলায় মইশাল, বারি-২, বারি ৩ ও থাই নামে চারটি জাতের আদার চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭০০টি বস্তায় আদার চাষ হয়েছে, যা গত বছরের থেকে ৭০০ বস্তা বেশি। আর আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৭০০ কেজি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, বাড়ির আঙ্গিনায় বা ফলের বাগান, পরিত্যক্ত জমিতে অনন্ত ১০/১৫ টা বস্তায় আদা চাষ করলে পরিবারের আদার চাহিদা পূরণ হবে। এতে প্রতিবছর আমাদের আদা আমদানি নির্ভরতা কমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এজন্য আমরা কৃষকদের আদা চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করে আসছি। এ বছর ফলন আশানুরূপ হওয়ায় অনেক কৃষকের মাঝে বস্তায় আদা চাষের জন্য আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে আদা চাষ দ্বিগুন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।