ঢাকা
৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৮:৪৬
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ৩০, ২০২৪

কচুরিপানায় কর্মসংস্থান

অংকন তালুকদার, কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি: অনাদর আর অবহেলায় বড় হয়েও যে সৌন্দর্যের দিক থেকে নামিদামি ফুল থেকেও অনেক স্নিগ্ধ আর মোহনীয় হওয়া যায়, তার উত্কৃষ্ট উদাহরণ কচুরিফুল। বাজারে এই ফুল বিকিকিনি হয় না, অর্থাৎ অর্থমূল্য নেই। এই নেই অর্থমূল্যটাই অমূল্য।  কচুরিপানা পুরো অংশটাই পরিবেশবান্ধব, যা বিভিন্ন ঘনমাত্রায় ক্ষতিকর ভারী ধাতুসমূহ যেমন ক্রোমিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট, ক্যাডমিয়ামকে শোষণ করে নেয়, যা অনেকেরই অজানা।

সম্প্রতি ফেলনা হিসেবে দেখা, অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা কচুরিপানাই জাগালো অর্থের সম্ভাবনা। সময়ের ব্যবধানে এর ব্যবহার ও সহজলভ্যতার কারণে রফতানিযোগ্য পণ্য তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এমনকি রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বহু দেশে। দৃষ্টিনন্দন ফুলঝুড়ি, রঙিন পাপোশ, রকমারি ফুলদানি, আর বিভিন্ন রঙের পাটি তৈরির কাঁচামাল এ কচুরিপানা। ব্যাগ, টুপি আর সুন্দর সব জায়নামাজও তৈরী হয় এর থেকে। এই জিনিসগুলো অধিকাংশই পরিবেশবান্ধব ও প্লাস্টিক সামগ্রীর বিকল্প হিসেবে প্রণিধানযোগ্য।ফলে দেশে-বিদেশে এর চাহিদা অনেক। এর সুবাদে  গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের কর্মসংস্থান হচ্ছে এ কচুরিপানা থেকেই। 

সাধারণত কচুরিপানা ১৫ থেকে ২০ সে. মিটার লম্বা হয়। আর দণ্ডে অবস্থিত পাতার মধ্যে থাকে ৬টি পাপড়ির সংবলিত ৯-১০টি দৃষ্টিনন্দন নীল-হলুদ-সাদা ময়ূরী পুষ্প। আসলে কচুরিপানা কমেলিনেলস বর্গের পন্টিডেরিয়াসি পরিবারের আওতাভুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম ইচোরনিয়া ক্রাসিপস। এরা সাতটি প্রজাতির আওতায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। তবে আমাদের দেশের প্রজাতির নাম ব্রাজিলান কচুরিপানা। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে। যা ২৫ থেকে ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে। কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। প্রায় দুসপ্তাহে দ্বিগুণ হয়ে যায়।

কোটালীপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বানারজোর, তালপুকুরিয়া, গজালিয়া, নয়াকান্দি ও কাচারিভিটা গ্রাম। এখানকার খালে আর বিলে মাইলের পর মাইল দিগন্ত বিস্তৃত কচুরিপানা আপনার দৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করলেও এই কচুরিপানাই এ এলাকার নিম্নবিত্তদের আয়ের এক অন্যতম উৎস। সকল বয়সের নারী পুরুষ এমনকি শিক্ষার্থীরাও তাদের খরচ যোগাতে সহযোগী পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এটি। সকাল হলেই কচুরিপানা সংগ্রহে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন তারা। বিনা খরচে সংগ্রহ করা হচ্ছে এগুলো। সংগ্রহকারীদের তালিকায় আছেন গৃহবধুরাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামীণ সড়কের পাশেই কাঁচা কচুরিপানা শুকানোর কাজে ব্যস্ত শংকর বাড়ৈ।

তিনি বলেন, ভ্যানে করে কচুরিপানা ক্রয় করতে আসেন উদ্দোক্তারা। মাঘ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুম থাকলেও এর সংগ্রহ চলে সারা বছরজুড়ে। জলাশয় থেকে কচুরিপানা কাটার পর শুকানোর প্রক্রিয়ায় প্রায় ৫ থেকে ৬ দিন লেগে যায়। প্রতি কেজি শুকনা কচুরিপানা বিক্রি হয় ৫২ টাকা দরে। ১ কেজি শুকনো মাল পেতে সংগ্রহ করতে হয় প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি কচুরিপানা। প্রতি মণ কাঁচা কচুরিপানা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় আর শুকনা বিক্রি হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। ফলে অনেকটা বিনা পুঁজিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এলাকার অসংখ্য মানুষ।

শুকানোর কাজে ব্যস্ত তাহীনুর বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, সংসারের কাজ শেষ করে কচুরিপানার ডাটা শুকানোর কাজ করি। দৈনিক তিন থেকে চার ঘন্টা রোদে থাকতে হয়। এখানকার আয় থেকে নিজের খরচ মেটানোর পাশাপাশি প্রয়োজনে সংসারেও দিতে পারছি।

নিলুফা বেগম নামের আরেকজন বলেন, বাড়ির উঠানে, কাছাকাছি মাঠে বা সড়কে ডাটা শুকানোর কাজ  হওয়ায় অনেক সুবিধা হয়েছে। বাড়ির কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় না। সংসারে বাড়তি আয় হওয়ায় আমরা অনেক খুশি।

স্কুলছাত্র নয়ন বলেন, বাবা মায়ের কাজে সহযোগিতা করার জন্য স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে পড়াশুনার পরে অবসর সময়টাকে কাজে লাগাতে প্রথমে কাজটা শিখে এখন দৈনিক একশ থেকে দুইশ টাকা আয় করতে পারছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায় বলেন, কচুরিপানা আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর মনে হলেও কৃষিক্ষেত্রে এর যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। মাটিতে শক্তি যোগাতে ভূমিকা রাখে কচুরিপানা।বিল বা ঝিলে ভাসমান কচুরিপনার ওপরে মাটি ও গোবর সার ফেলে ধাপ ভুর তৈরি করে তার ওপর লাউগাছ, পুদিনা, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি চাষ করে প্রচুর ফসল পাওয়া যায়। তা ছাড়া গ্রাম-বাংলায় পাট জাগ দেওয়ার প্রাক্কালে এর ওপর কচুরিপানা রেখে পচানোর কার্যক্রমটি তরান্বিত করা হতো। যা এখনও অব্যাহত। কচুরির পাতা আর মূলের মাঝে ফাঁপা কাণ্ডসদৃশ অংশটি দূষিত পানি থেকে ভারী ধাতুসমূহ শোষণ করে নিতে পারে যা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ইতিমধ্যে প্রমাণিত।

তিনি বলেন, শুকনো কচুরিপানা এক সময় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হতো। কিন্তু এখন সেই পানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফুলদানিসহ নানা সামগ্রী। রাখছে কর্মসংস্থানের বিশেষ ভুমিকা। এতে নারী পুরুষদের যেমন আর্থিকভাবে উপকার হচ্ছে, তেমনি জলাশয়ের কচুরিপানা রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন হস্ত ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানে। ভালো পরিচর্যা ও যত্নসহকারে ব্যবহার করলে এসব পণ্য ১০ বছর পর্যন্ত টেকসই হতে পারে। পচনশীল হওয়ায় কচুরিপানা থেকে উৎপাদিত পণ্য পরিবেশবান্ধব। এ ছাড়া কচুরিপানায় তৈরি পণ্য মৃদু সুবাসও ছড়ায়।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram