সময় তখন সকাল সাড়ে ১০টা। চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীর উপস্থিতিতে তখন কানায় কানায় পূর্ণ। প্রতিটি বিভাগের চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে রোগীর দীর্ঘলাইন। ওই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক গিয়াস উদ্দিন হাসপাতাল কক্ষের দরজা আগলে নিজের সন্তানকে পড়াতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।
চেম্বারের সামনে রোগীদের উদ্ভট আচরণে কর্তব্যরত সাংবাদিক ওই কক্ষে প্রবেশ করতেই রেগে অসদাচরণ করতেও দেখা গেছে ডা. গিয়াস উদ্দিনকে।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগের একটি কক্ষে ডা. গিয়াস উদ্দিনের সন্তানকে পড়ানোর ওই দৃশ্য চোখে পড়ে। সরকারি বিধি মোতাবেক হাসপাতালগুলোতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও ডা. গিয়াস উদ্দিন হাসপাতালে আসেন নিজের ইচ্ছেমতো। নিয়মানুযায়ী ৬ ঘণ্টা রোগী দেখার কথা থাকলেও তিনি কখনো ১-২ ঘণ্টার বেশি রোগী দেখেন না।
হাসপাতালে আগত সেবা গ্রহীতা একাধিক রোগী জানান, সকাল ৮টা থেকে বসে আছি। তিনি (ডা. গিয়াস উদ্দিন) এসেছেন ১০টার পর। এসেই দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। কেন দরজা বন্ধ করে রেখেছেন আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি।
পরে সাংবাদিক এসে ওই কক্ষে ঢুকে দেখেন ডাক্তার গিয়াস উদ্দিন আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে দরজা বন্ধ করে নিজের সন্তানকে পড়ান।
ইতিমধ্যে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন ঘটলেও ক্ষমতার দাম্ভিকতা কাটেনি ডা. গিয়াস উদ্দিনের। বেপরোয়া হয়ে চিকিৎসার মতো মহান পেশাকে রীতিমতো ব্যবসায় পরিণত করেছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছেন সকাল ৮টা থেকে নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘মাহি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড থেরাপি সেন্টারে’ রোগী দেখেন ডা. গিয়াস উদ্দিন। সকাল ১০টা পর্যন্ত নিজের ব্যক্তিগত হাসপাতালে রোগী দেখার পর যান কর্মস্থলে।
সেখানে নিজের খেয়াল খুশিমতো রোগী দেখে দুপুর ১টার বাজার আগেই সরকারি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। দুপুর ২টা থেকে আবারও নিজের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১ হাজার টাকা ফিতে রোগী দেখেন রাত ১০ পর্যন্ত।
হাসপাতালের কক্ষে দরজা আগলে সন্তান পড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে ডা. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘তোমার কি সমস্যা? আমি কি করব না করব, সেটা কি তোমার কাছ থেকে জেনে করতে হবে? আমার ওয়াইফও ডাক্তার। আমার সন্তানকে কী খালি বাসায় রেখে আসব নাকি?
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিনা আক্তারের ব্যবহৃত ফোনে একাধিক বার কল করলেও তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।