আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: পরকীয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্ত্রী তিন্নি আক্তারকে (২০) স্বামী মনির খাঁন (২২) পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিন্নির বাবা নিজাম হাওলাদার এমন অভিযোগ করেছেন। স্ত্রী তিন্নিকে স্বামী মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
এ সময় স্বামী মনির খান স্ত্রীর মরদেহ রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে ও তার মা লাইলি বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার সকালে তিন্নির মরদেহ পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করেছে। ওই দিন বিকেলে তার মরদেহ বাবার পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে আমতলী উপজেলার তারিকাটা গ্রামে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার চাওড়া চন্দ্রা গ্রামের নিজাম হাওলাদারের কন্যা তিন্নিকে একই উপজেলার তারিকাটা গ্রামের হারুন খাঁনের ছেলে মনির খাঁনের সঙ্গে এ বছর এপিল মাসে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকে মনির খাঁন অটো রিকশা কিনবে বলে যৌতুক দাবী করে কিন্তু দরিদ্র বাবার পক্ষে যৌতুক দেয়া সম্ভব হয়নি। যৌতুক না পেয়ে স্বামী মনির খাঁন স্ত্রী তিন্নির বিরুদ্ধে পরকীয়ার মিথ্যা অপবাদ দেয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেন তিন্নির বাবা নিজাম হাওলাদার। মঙ্গবার সন্ধ্যায় স্ত্রী তিন্নিকে স্বামী মনির খাঁন পরকীয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে মনির স্ত্রী তিন্নিকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মনিরুজ্জামান খাঁন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ঘাতক স্বামী মনির খাঁন স্ত্রীর মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে ও তার মা লাইলি বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার সকালে নিহত তিন্নির মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করেছে। ওইদিন বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে তার মরদেহ বাবার বাড়ীর পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় আমতলী থানার হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী কয়েকজন বলেন, স্বামী মনির খাঁন প্রায়ই স্ত্রী তিন্নিকে নানা অযুহাতে মারধর করতো। তারা আরো বলেন, শ্বশুর হারুন খাঁন ও শ্বাশুড়ী লাইলি বেগম পুত্রবধুকে মারধরে ছেলেকে সহযোগিতা করেছে।
নিহত তিন্নির বাবা নিজাম হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই মেয়েকে যৌতুকসহ নানা অযুহাতে নির্যাতন করছিল জামাতা মনির খাঁন ও তার পরিবারের লোকজন। গত ছয় মাস অটো রিকশা কিনবে বলে জামাতা মনির খাঁন আমার মেয়ের কাছে যৌতুক দাবী করে। যৌতুক এনে দিতে রাজি না হওয়ায় জামাতা আমার মেয়ের ওপর পরকীয়ার মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে। মঙ্গলবার পরকীয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবী করছি।
ঘাতক স্বামী মনির খাঁন বলেন, আমার স্ত্রী তিন্নি আক্তার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার অনুপস্থিতে মোবাইলে কথা বলতেছিল। এ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় ক্ষুব্ধ হয়ে আমি তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করি। এতে তিন্নি চেয়ার থেকে ঘুরে পড়ে যায়। তাৎক্ষনিক আমি তাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মনিরুজ্জামান খাঁন বলেন, হাসপাতালে আনার পূর্বেই তিন্নি মারা গেছেন। তার মাথায় আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, নিহত তিন্নির ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক স্বামী মনির খান ও শ্বাশুড়ী লাইলি বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়।