জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার: কক্সবাজারের চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামুতে সরকারি বনভূমি দখল করে পশুর হাট বসিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা পথে পথে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। তাদের ভয়ে প্রশাসন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
দখল করা এই বিস্তৃত বনভূমি উদ্ধারের সহযোগিতা চেয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মারুফ হোসেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় গেল ৫ দিনেও দখলবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
অপরদিকে, অবৈধ এই হাট উচ্ছেদে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন-ঈদগাঁও বাজারের ইজারাদার রমজানুল আলম, খরুলিয়া বাজারের ইজারাদার সরওয়ার, উখিয়ার দারোগা বাজারের ইজারাদার আব্দুর রহিম ও মরিচ্যা বাজারের ইজারাদার ছামু বড়ুয়া।
জানা গেছে, দেশের পট-পরিবর্তনের পর থেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইসলাম নগর এলাকায় গত ৩০ নভেম্বর রাতারাতি পশুর হাট বসায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই এই পশুর হাটটি বসিয়েছে জনৈক মানিক, ওমর আলী, আজগর, মুকুল, বাচ্চু, মামুনসহ আরও কয়েকজন। তাদের সাথে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতাকর্মীও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এই পশুর হাটের দোহায় দিয়ে কক্সবাজারের অন্যান্য হাট থেকে পশু ক্রয় করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে নেওয়ার পথে চকরিয়ার হাটে চাঁদা আদায় করার অভিযোগও উঠেছে।
জানা যায়, অবৈধভাবে এই পশুর হাট বসানোর কারণে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে কোটি কোটি টাকায় ইজারা দিয়ে বসানো অন্যান্য পশুর হাটগুলোর ইজারাদাররা চরম লোকসানের মুখে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পশুর হাটে বিক্রি করা হচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম গর্জনিয়ার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা মায়ানমারের অবৈধ পশু। অন্যদিকে চাকমারকুল, খরুলিয়া, গর্জনিয়া, ঈদগাঁও পশুর হাট থেকে পশু ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়ার পথে পশুর গাড়ি আটকাচ্ছে চকরিয়ার অবৈধ হাটের সাথে জড়িত লোকজন।
গাড়ি আটকে তারা গরু প্রতি ১/২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। না দিলে গাড়ি আটকে রাখা হয়। এর অংশ হিসেবে গত ২ ডিসেম্বর এক ব্যবসায়ীর চারটি আটকে রাখা হয়। পরে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ছেড়ে দেয়া হয়।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মারুফ হোসেন বলেন, 'অবৈধভাবে বনের জমি দখল করে পশুর হাটটি বসানো হয়েছে। হাটটি উচ্ছেদের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। উচ্ছেদের সহযোগিতা চেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না।'
চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এই পশুর হাট বসানোর ব্যাপারে আমাকে জানিয়েছে। বাজারটি অনেক পুরনো। মধ্যখানে অনেক দিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি এটি আবার চালু হলো। এখনও জেলা প্রশাসন অনুমোদন দেয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমোদন আছে। উপজেলা প্রশাসন খাস কালেকশনও করছে।'
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, 'পশুর হাট বসানোর বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। জায়গাটি বনবিভাগের। তারা অভিযানে গেলে সহযোগিতা করা হবে।'
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, 'বন ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশের কোন কাজ নেই। উচ্ছেদ কার্যক্রমে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ চাইবে। ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া পুলিশের উচ্ছেদ বিষয়ে কোন ক্ষমতা নেই। যদি ম্যাজিস্ট্রট সহযোগিতা চান, তাহলে পুলিশ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।'
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বিষয়টি অবগত হয়েছেন বলে জানান। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ডিসি।