মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বিবেচনায় রাজশাহীতে বৃহস্পতিবার থেকে টুকরো ইলিশ বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে কোথাও ২৫০ গ্রামের নিচের টুকরো ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে না। আর এই আকারের ইলিশের টুকরো কিনতেও ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে গড়ে ৪০০-৫০০ টাকা। ফলে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরেই রয়েছে ইলিশ। এদিকে আগামীকাল ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ মাছ শিকার, বাজারজাত ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এ হিসেবে শুক্রবার শেষ হয়েছে ইলিশ শিকার। আজ শনিবার শেষ হচ্ছে ইলিশ বিক্রি ও পরিবহন।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহীর বাজারে এক কেজির ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, দেড় কেজির ইলিশ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ৩০০-৩৫০ গ্রাম জাটকা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৩০০-৩৫০ গ্রাম ওজনের জাটকার টুকরো ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ৫০০-৬০০ গ্রাম ইলিশের টুকরো ২ হাজার টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে বর্তমানের চেয়ে ইলিশের দাম কিছুটা কম ছিল। তবে দুর্গাপূজার মধ্যেই ইলিশ শিকার, বিক্রি ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার কারণে দাম অনেক বেড়েছে। ফলে দাম বেশি হলেও বাজারে ইলিশের বেচা তেমন হচ্ছে না, এ কথা বলা যাবে না। ধনিক শ্রেণি ও সামর্থ্যবান মানুষ বেশি দামেই ইলিশ কিনে খাচ্ছেন, অতিথি আপ্যায়ন করছেন। তবে এ সংখ্যা মোট গ্রাহকের ২০-২৫ শতাংশের বেশি হবে না। এর মধ্যে অনেকে আবার ছোট সাইজের দুই-একটা করে জাটকা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সাহেববাজারে মৎস্যজীবী সমিতির ব্যানারে টুকরো ইলিশ বিক্রির উদ্বোধন করেন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদ নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের সভাপতি ফরিদ মামুদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী টুকরো ইলিশ বিক্রির উদ্বোধন করেন। কিন্তু ছোট সাইজের জাটকার টুকরো ২৫০ গ্রাম সর্বনিম্ন ৩০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক সময় টুকরো মাছের সঙ্গে নরম-পচা মাছের টুকরো গছিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে নিম্নবিত্তরা হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
রাজশাহীর নিউ মার্কেট আড়তের পাশে খুচরা ইলিশ বিক্রেতা আলাউদ্দিন প্রায় ৩০ বছর ধরে ইলিশ বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বর্তমান ভরা মৌসুমেও বাজারে ইলিশ তেমন আসছে না। যে সামান্য ইলিশ আসছে, তার দামও বেশ চড়া। ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতাদের বেশির ভাগ ছোট সাইজের জাটকা কিনছেন। তবে কিছু মানুষ বড় ইলিশ কিনছেন। তবে এ সংখ্যা কম। তিনি বলেন, ১০/১২ বছর আগেও ভরা বর্ষায় ইলিশের দাম কমে যেত। তখন সবশ্রেণির মানুষ ইলিশ কিনত। এখন বছর জুড়েই ইলিশের দাম চড়া থাকে। তাই নিম্ন ও মধ্যরা ইলিশ কিনছেন না।
ইলিশ কিনতে আসা অনিরুদ্ধ বলেন, এক মাস ধরে ভাবছি, দাম একটু কমলে ইলিশ কিনব। কিন্তু দাম তো কমেনি, বরং বাড়ছেই। তাই কেনা হয়নি। বৃহস্পতিবার শুনলাম টুকরো ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার এসে দেখি গোটা ইলিশের চেয়ে টুকরো ইলিশের দাম কেজিতে অন্তত ৪০০-৫০০ টাকা বেশি। এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) ইলিশ ৩০০- ৫০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানেও আছে নানা কারসাজি। তাই ইলিশ কেনার চিন্তা আপাতত বাদ।
ইতিহাস ও নদী গবেষক মাহাবুব সিদ্দিকী বলেন, ১০-১২ বছর আগেও বর্ষায় ধনী-গরিব প্রায় সবাই ইলিশ খেত। তখন রাজশাহীর পদ্মায়ও বর্ষায় ইলিশ ধরা পড়ত। এখন পদ্মায় ইলিশ ধরা পড়ে না, মাঝে মধ্যে দুই-একটা জাটকা ধরা পড়ে বলে শুনি। গরিব মানুষেরাও ইলিশ বিনতে পারে না। তাই ইলিশ এখন ধনীদের তরকারি।