ঢাকা
২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:৩০
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ১৮, ২০২৪
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২৪
প্রকাশিত : আগস্ট ১৮, ২০২৪

কর্মী পাঠানোর নামে ৪ এমপির ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট!

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ চারজন সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকা অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও বেনজীর আহমেদ। মাত্র দেড় বছরে তাঁদের মালিকানাধীন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চার লাখ শ্রমিক পাঠিয়ে ওই অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়।

সম্প্রতি চার সাবেক এমপির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা লোপাটের এই অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কারসাজিতে থাকা ওই সাবেক চার এমপির অবৈধ সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। দুদক সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক এমপিদের মালিকানাধীন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর তথ্যসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য সংগ্রহে শিগগিরই বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হবে। অনুসন্ধান টিম অভিযোগসংশ্লিষ্ট অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি তাঁদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে খোঁজ নেবে। নির্ধারিত সময়ে অনুসন্ধান শেষে টিম কমিশনে প্রতিবেদন দেবে।

অভিযোগে বলা হয়, চক্রটি চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

এর সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। এত শ্রমিক পাঠালেও অনেকে কাজ করার অনুমতি না পাওয়ায় ফেরত এসেছেন। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় হয় ৭৯ হাজার টাকা। বাস্তবে নেওয়া হয়েছে অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভেরিটে ইনকরপো‌রেটেডসহ পাঁচটি সংস্থার গবেষণায় বেরিয়ে আসে, মালয়েশিয়া যেতে গড়ে একজন বাংলাদেশি কর্মী পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার টাকা খরচ করেছেন।

এই খাতে গত দেড় বছরে সাড়ে চার লাখের মতো লোক পাঠিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। শ্রমিকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়। বরং সিন্ডিকেট তৈরির রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে।

প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের জুলাই মাসে যখন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে, তখন কর্মী পাঠানোর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের দায়িত্ব পায় মালয়েশিয়া। তাদের কাছে এক হাজার ৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠিয়েছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু মাত্র ২৫টি এজেন্সির নাম নির্বাচন করা হয়। এজেন্সি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা ছিল না।

এ সুযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ও তাঁর পরিবার এবং সাবেক ওই তিন এমপি ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা, সিটি করপো‌রেশনের কাউন্সিলরসহ আওয়ামীপন্থী লোকজনের মালিকানাধীন নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠিয়েছে। অন্যদিকে অনেক শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গিয়ে নানা জটিলতায় কাজ পাননি। কেউ কেউ ঋণ করে গিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন ফেনী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। তাঁর মালিকানাধীন স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড লাইসেন্স নেওয়ার সাড়ে তিন বছরে ১০০ কর্মী বিদেশ পাঠায়। অথচ এই সিন্ডিকেটে যোগ দেওয়ার পর গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় আট হাজার কর্মী পাঠায় স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড।

নিজাম হাজারীর মতো আরো দুজন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পরিবারের দুজন সদস্যের রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে। এর মধ্যে ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল আট হাজার ৫৯২ জন, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল সাত হাজার ৮৪৯ জন এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ সাত হাজার ১৫২ জন ও মেয়ে নাফিসা কামালের মালিকানাধীন অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল দুই হাজার ৭০৯ জন শ্রমিক পাঠিয়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা হলেও বাস্তবে এই সিন্ডিকেট কর্মীপ্রতি পাঁচ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্মীপ্রতি চার লাখ ৬৫ হাজার টাকা বেশি আদায় করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) গত দেড় বছরে মালয়েশিয়া যেতে প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মীর ছাড়পত্র দিয়েছে, যার মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ও মেয়ে নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনালের নামে মালয়েশিয়ায় গেছেন মোট ৯ হাজার ৮৬১ জন। দুর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেট গঠনের সময় মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঐশী ইন্টারন্যাশনাল এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল।

মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিএমইটির তথ্যানুসারে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠিয়েছে। তবে সিন্ডিকেটে প্রবেশের পর এই এজেন্সি একাই ছাড়পত্র নিয়েছে আট হাজার ৫৯২ কর্মীর।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোয় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার আগে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না। বিদেশে পাঠিয়েছিল মাত্র ২৩৮ জন কর্মী। তবে এই সিন্ডিকেটে প্রবেশের পর তারা শীর্ষ তালিকায় চলে আসে। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছেন সাত হাজার ৮৪৯ কর্মী। সিন্ডিকেট গঠনের সময় বেনজীর রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি ছিলেন।

এই সিন্ডিকেটের আরেক নেতৃত্বে ছিলেন বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন ওরফে স্বপন। সিন্ডিকেটের ১০০টি এজেন্সির মধ্যে ৬৯টির নাম তিনি ঠিক করেছেন। তাঁর মাধ্যমেই মালয়েশিয়ায় টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএমইটির হিসাবে স্বপনের এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের নামে মালয়েশিয়ায় সাত হাজার ১০২ শ্রমিক গেছেন।

ইশতিয়াক আহমেদ নামক ব্যক্তির এজেন্সি বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেড ও জামাতা গোলাম রাকিবের নতুন এজেন্সি পিআর ওভারসিজ চার হাজারের বেশি কর্মী পাঠিয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলামের এজেন্সি বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড সাত হাজার ২২৫টি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদের অনন্য অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সি দুই হাজার ৬০০ কর্মীর ছাড়পত্র নিয়ে লোক পাঠিয়েছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram