কক্সবাজার প্রতিনিধি: দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে কক্সবাজার আদর্শ মহিলা কামিল মাদরাসা। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী প্রধান থাকাকালে নিজের নামে গড়েছেন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ। আর মাদরাসাকে বানিয়েছেন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। লুটপাট করেছেন মাদরাসার টাকা ও সম্পদ। এ অভিযোগ তদন্ত করতে মাঠে নেমেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদরাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ।
দুদকে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসার ১৩টি দোকানের এক কোটি ২০ লাখ টাকা সেলামি মাদরাসার অ্যাকাউন্টে জমা করেননি। সেই দোকানগুলোর প্রতি মাসের ভাড়া এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তাও তিনি মাদরাসার অ্যাকাউন্টে জমা করেননি।
দীর্ঘ ৩৬ বছর একই পদে বহাল থেকে অবসর নেয়ার পরও মাদরাসাটিতে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে নিজের আপন মানুষকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে পদায়ন ও মাদরাসা কম্পাউন্ডে ভবন দখল করে বহাল তবিয়তে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
গেল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা মুখ খুলতে না পারলেও গত ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী উদ্ধার করে মাদরাসা থেকে বের করে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
সম্প্রতি কক্সবাজার আদর্শ মহিলা কামিল মাদরাসার সদ্য অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ছাড়াও বর্তমান সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মাদরাসাটির শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে একাধিক সংস্থা মাঠে নেমেছেন।
জানা যায়, অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী প্রতিষ্ঠাকালীন ১৯৮৯ সাল থেকে মাদরাসাটির অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন শুরু করে ২০২৩ সালের ২ জুন অবসরে যান। আইনের তোয়াক্কা না করে মাদরাসা ক্যাম্পাসে বসতি গড়ে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। ফরিদ আহমেদ চৌধুরী মাদরাসা কম্পাউন্ডে থাকা এতিমখানার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে নিজের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করান।
অভিযোগ সূত্র মতে, মাদরাসা কম্পাউন্ডের ভেতরে থাকা ছৈয়দিয়া বালিকা এতিমখানার টাকা দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তিনি মাদরাসা ও এতিমখানার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন ব্যক্তিগত অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ। এই সম্পদের মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত ভবনের পূর্বপাশে ঝিলংজা মৌজায় ৯ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের এক একর ৮২ শতক জমি, রামুর কচ্ছপিয়া মৌজায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের সাত একর ৪০ শতক জমি, ইনানী মৌজায় এক কোটি ৭৩ লাখ টাকা মূল্যের দুই একর চার শতক জমি, কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনাল এলাকায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের আট শতক জমি ও কক্সবাজার পৌরসভা মৌজার পেতা সওদাগর পাড়ায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৪০ শতক জমি।
দুদকে দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ওই মাদরাসার একটি অংশ ছৈয়দিয়া বালিকা এতিমখানা। এই এতিমখানায় ১০২ জন শিক্ষার্থী থাকলেও টাকা আত্মসাৎ করার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নামে-বেনামে ১৭৫ জন শিক্ষার্থী।
এ বিষেয় সাবেক অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী জানান, এ রকম অভিযোগ অতীতেও অনেকবার করা হয়েছে এবং তদন্তও হয়েছে। সুতরাং আনিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।