ঢাবি প্রতিনিধি: প্রায় ৪ মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকার্যক্রম। রবিবার ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছেন বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তবে এখনও বেশ কিছু বিভাগে অচলাবস্থা দৃশ্যমাণ রয়েছে।
এর আগে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রথম বর্ষ ছাড়া অন্য সব বর্ষের ক্লাস শুরু হবে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের প্রথম বর্ষের ক্লাস ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তব্যক্তিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে বিভাগ, ইনস্টিটিউট, অনুষদ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ইতিমধ্যে গৃহীত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলিয়ে গত ২ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। তবে এ সময়ে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ক্লাস চালুর কথা থাকলেও প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে।
এরপর শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে ৭ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। এর মধ্যে কোটা আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়ে। সবমিলিয়ে বিগত ১১২ দিন বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকার্যক্রম।
দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীদের ভিড়৷ ‘ক্লাসে ফেরার উৎসব’ নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে। ফুল দিয়ে শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে এবং অনুষ্ঠান শেষে মিষ্টিমুখ করানো হচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইখ আল তমাল বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দেশের বৃহৎ একটি পরিবর্তন এনেছে। অগ্রভাগে ছিল শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মূল যে কাজ ক্লাসে ফেরা সেটা আমরা নতুনভাবে শুরু করেছি। এই অভ্যুত্থানে অনেক ছাত্র নিহত হয়েছেন অনেকে আহত হয়েছেন আবার অনেকে তাদের স্বজন কিংবা বন্ধুদের হারিয়েছেন। তাদের ত্যাগের স্পিরিট ধারণ করে আমরা নতুনভাবে ক্লাসে ফিরেছে।’
তিনি জানান, ‘সহপাঠীদের সুস্থ ও নিরাপদ দেখে স্বস্তি পেয়েছি। এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করাটাও চ্যালেঞ্জিং। তবে শিক্ষার্থীদের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে সবসময়। এতদিন বাদে ক্লাসে ফিরতে পেরে আমরাও খুশি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান সকালে বিভিন্ন অনুষদের ক্লাসরুম পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও কার্যকরভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা এক ধরনের মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এই ট্রমা নিরসন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঘাটতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’