ইবি প্রতিনিধি: রুটিন অনুসারে শিক্ষকদের ক্লাসে যোগদান নিশ্চিতকরা সহ জুলাই বিপ্লবোত্তর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংস্কারে শতাধিক প্রস্তাবনা দিয়েছে শাখা ছাত্র শিবির। শনিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ-এর কাছে লিখিত আকারে তারা প্রস্তাবনা দেন। পরে দুপুর দেড়টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রস্তাবনাগুলো উপস্থাপন করেন তারা। সেখানে ইবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি এইচ এম আবু মুসা, সেক্রেটারি মাহমুদুল হাসান ও দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ আলী উপস্থিত ছিলেন।
২৪টি ক্যাটাগরিতে মোট ১১০ টি দাবি তুলে ধরেন শিবির নেতারা। তাদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট যেসকল ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো তাদেরকে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বিগত ১৬ বছরে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, বিগত আওয়ামী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকল দুর্নীতির তথ্য শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল স্থাপনা ও ফলক ফ্যাসিবাদের আইকনদের নামে নামকরণ করা হয়েছে তা অবিলম্বে পরিবর্তন করতে হবে, নন-ক্রেডিট বাংলাদেশ স্টাডিজ কোর্সকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করে কোর্স কন্টেন্ট হিসেবে জুলাই বিপ্লবের পটভূমি ও ইতিহাস পাঠযুক্ত করতে হবে, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একটি কর্ণার ও সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে হবে, ক্যাম্পাসে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিতকল্পে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং হল পরিচালনা ও সিট বন্টনসহ যাবতীয় কার্যক্রম রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন করে গণরুম-গেস্টরুম কালচার চিরতরে বিলুপ্ত করতে হবে, হল প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের ক্যাম্পাসে অবস্থান ও নিয়মিত অফিসে যোগদান নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়াও অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে, সেশনজট নিরসনে একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাধ্যতামূলক অনুসরণ করতে হবে, সেশন ভিত্তিক মেধাবৃত্তির সংখ্যা ও পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে এবং স্বৈরশাসনামলে লাগামহীনস্তাবে বর্ণিত বিভিন্ন ফি কমিয়ে যৌক্তিক কি নির্ধারণ করতে হবে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের সামগ্রিক আধুনিকায়ন, দক্ষ জনবল নিয়োগ ও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্রে উন্নীত করতে হবে, অতিদ্রুত আইন প্রণয়ন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনের দৃশ্যমান ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করতে হবে, অফিস চলাকালীন সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে, ক্যাম্পাসে স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুল তৈরী, কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিভিন্ন পদে নিয়োগ কার্যক্রম রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক প্রভাবমুক্ত এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হতে হবে, চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত সময়ের মধ্য সম্পন্ন ও ভূমি অধিগ্রহণ করে ক্যাম্পাসের পরিধি বাড়ানোর দাবি করেছেন তারা।
ইবি শাখা শিবির সভাপতি এইচ এম আবু মুসা বলেন, জুলাই বিপ্লবে মহান শহীদদের আত্মদান ও মূল্যবোধকে ধারণ করে নিরাপদ, আধুনিক ও নৈরাজ্যমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে উপযুক্ত সংস্কার প্রস্তাবনা প্রদান করা হয়েছে। এর আগে ক্যাম্পাস সংস্কার এবং ক্যাম্পাসের বাস্তবিক সমস্যাগুলো সনাক্ত করতে আমরা গবেষনা টিম করেছিলাম। আমরা পর্যালোচনা করে দাবিগুলো উপস্থাপন করেছি এবং উপাচার্যকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দাবিগুলো বাস্তবায়নে আমাদের থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। আমরা চাই ক্যাম্পাস নতুন ভাবে সংস্কার করা হোক, ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে উঠুক।