ঢাকা
১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৩৯
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ৩১, ২০২৪
আপডেট: আগস্ট ৩১, ২০২৪
প্রকাশিত : আগস্ট ৩১, ২০২৪

কাণ্ডারিহীন ৩৯ বিশ্ববিদ্যালয় : পাওয়া যাচ্ছে না যোগ্য উপাচার্য!

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি বা আচার্য কর্তৃক মনোনীত উপাচার্য না থাকলে উপ-উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেন। দুজনই না থাকলে ট্রেজারার দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ প্রায় সব পদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পদত্যাগ করেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ধরনের কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

কিছু বিভাগে শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে ক্লাস শুরু করলেও তা উল্লেখ করার মতো নয়। এমনকি মাস শেষ হলেও গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে দায়িত্বশীল কেউ না থাকায় বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়েও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় যোগ্য ভিসি খুঁজে না পেলেও আপৎকালীন সমস্যা সমাধানে ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারার না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দায়িত্ব পালন করতে বলেছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, পদত্যাগ ও অনুপস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিল, ক্ষেত্রবিশেষে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দিয়ে সাময়িকভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্র জানায়, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে বর্তমানে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। তাঁর আগে সম্প্রতি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য দেওয়া হয়েছে।

আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিনদের মধ্য থেকে মনোনীত একজনকে মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বা কাণ্ডারিহীন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগেরই উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ডিন, প্রক্টর ও হল প্রভোস্টরাও পদ ছেড়েছেন। যার সুনির্দিষ্ট হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপাচার্য নিয়োগে বেশ কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে বর্তমান সরকার।

এর মধ্যে গত সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ও সমর্থনকারী কাউকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে না। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে একাডেমিক স্কলার হতে হবে, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। কিন্তু সব মানদণ্ড পূরণ করা শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ভিসি নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর ভিসি ঠিক না করে উপ-উপাচার্য বা ট্রেজারার নিয়োগের দিকেও এগুনো যাচ্ছে না।

সম্প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘৪০টিরও বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যত দ্রুত সম্ভব পরিবর্তন আনতে হবে। এটিকে সুযোগও মনে করি। আমরা চাই, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকারের শিক্ষানুরাগী ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি আসুক। তাঁদের শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক যোগ্যতা থাকতে হবে। এত দিন এ জায়গায় আমাদের অবমূল্যায়ন হয়েছে।’

সূত্র জানায়, আইনগত দিক দিয়ে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও বুয়েট আলাদা। ফলে এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ভিসি নিয়োগ করতে চায় সরকার। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সোমবার ভিসি নিয়োগ করা হয়েছে। একই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও ভিসি নিয়োগ করা হয়েছে। এর পরের দিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) ডিনদের থেকে মনোনীত একজনকে ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীতে অবস্থিত ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গত ১৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলায় গত ১৩ আগস্ট থেকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ অনুপস্থিত রয়েছেন। আর ট্রেজারারও গত ১৯ আগস্ট থেকে ছুটি নিয়ে আর অফিসে আসছেন না। ফলে অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এক হাজার ৭০০ মাদরাসা দেখভালকারী এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চরম বিপাকে পড়েছে। বলতে গেলে সব কার্যক্রমই বন্ধ হয়ে আছে। এমনকি বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়েও আশংকা তৈরি হয়েছে।

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হচ্ছেন উপাচার্য। এখন ভিসি না থাকায় আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। অনেক কাজ আটকে আছে।’

জানা যায়, গত ১ জুলাই থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যান। তখন থেকেই বন্ধ আছে ক্লাস-পরীক্ষা। এরপর কোটা সংস্কার ঘিরে আন্দোলন শুরু হলে গত ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৮ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও পুরোপুরি ক্লাসে ফিরতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে হলে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট বৈঠকের প্রয়োজন হয়। যার সভাপতি উপাচার্য। কিন্তু উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার কেউ না থাকায় বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাউন্সিল বা সিন্ডিকেট সভা হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার কথায় যতটুকু জেনেছি, তাঁরা যোগ্য লোককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য হয়তো সময় নিচ্ছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক দিন ধরে স্থবির। তাই এটা নিয়ে আর দেরি করার সময় নেই। আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা যোগ্য লোককে খুঁজে বের করবেন। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, যাঁরা ভিসি হওয়ার জন্য তদবির করছেন, তাঁরা কিন্তু যোগ্য নন। যাঁদের পদের প্রতি কোনো মোহ নেই, তাঁরাই প্রকৃত যোগ্য লোক।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বা স্ব-উদ্যোগে পদত্যাগ করা ভিসিদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ও বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার।

এ ছাড়া পদত্যাগ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিহির রঞ্জন হালদার এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান।

পদত্যাগকারী আরো উপাচার্যরা হলেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম অন্যতম।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram