ঢাকা
২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১১:২৭
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ৩১, ২০২৪
আপডেট: আগস্ট ৩১, ২০২৪
প্রকাশিত : আগস্ট ৩১, ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়তে পারে বন্যাদুর্গতরা

মাসুদুর রহমান খান,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: প্রায় ১১ দিন ধরে লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলার ৯০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি। জেলার বেশির ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। মাছের ঘেরও প্লাবিত হয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। এ ক্ষতি পোষাতে দীর্ঘ সময় লাগবে বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। পানি ধীর গতিতে কমতে থাকায় দীর্ঘমেয়াদে জলাবদ্ধতার কবলেও থাকতে হবে এ অঞ্চলের মানুষকে। খাল-বিলে প্রতিবন্ধকতা থাকায় পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে। দ্রুতই পানি নামার কোনো লক্ষণ দেখছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের কৃষক হারুনুর রশিদ ৮-৯ লাখ টাকা খরচ করে নতুন ঘর তৈরি করেছেন। ঘরের উত্তর পাশের দেয়াল ভেঙে গেছে। বন্যার আগে টানা বৃষ্টিতে আমন ধান নষ্ট হয়েছে তার। ঋণের টাকায় চারটি পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। তাও ভেসে গেছে বন্যায়।

হারুনুর রশিদ বলেন, ত্রাণে এক বেলা পেটের ক্ষুধা মিটলেও কষ্ট মিটবে না। তিল তিল করে গড়া সংসার বানের জলে ভেসে যাওয়ার দৃশ্য নিজ চোখে উপলব্ধি করেছি। ঘুরে যে দাঁড়াব সে জোগানও নেই আমার।বন্যাকবলিত ঘরের কোণে ১০ মাসের শিশুকে নিয়ে বসে ছিলেন হারুনুর রশিদ। পাশেই ছিলেন স্ত্রী নারগিস বেগম।

এ কৃষক বলেন, বন্যায় আমার সব শেষ। এ বছর ৮-৯ লাখ টাকা খরচ করে নতুন ঘর করেছি। এখন আর কিছুই নেই আমার।২২ আগস্ট রাতে নোয়াখালী থেকে বন্যার পানির চাপ বাড়তে থাকে লক্ষ্মীপুরে। শুধু কৃষক হারুনুর রশিদ বা তার প্রতিবেশীরাই নন, বন্যায় জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এর মধ্যে ৩০ হাজার পরিবার সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারলেও অধিকাংশেরই আশ্রয় মিলেছে অন্যের বাড়ির ছাদ কিংবা নিজের জলাবদ্ধ বাড়িতেই। কর্মহীন হয়ে পড়েছে পানিবন্দি এসব মানুষ।

বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ কাঁচা বাড়ি হেলে পড়তে শুরু করেছে। অনেকেই হেলে পড়া ঘর বাঁশ কাঠের খুঁটি দিয়ে কোনোমতে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।গুপিরখিল গ্রামের বেলাল হোসেন বলেন, একচালা ঘরের ভেতরেই কোমর পানিতে সব আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরটির নিচের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় পূর্ব দিকে হেলে রয়েছে। পাশ থেকে পাঁচটি খুঁটি দেয়ায় এখন পর্যন্ত ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে। কোমর পানিতে আর কতদিন টিকে থাকবে?পরিবারের সদস্যদের স্বজনদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন দুবার করে ঘরটি দেখতে আসেন।বন্যার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় পর্যাপ্ত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে দুই-তিনদিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ত্রাণ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা এলেও দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছাচ্ছে না। আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার থাকলেও ঘরবন্দি মানুষগুলো রয়েছে অর্ধাহার-অনাহারে।গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ধীর গতিতে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে কোথাও কোথাও এক বা দুই ইঞ্চি করে পানি কমছে। পানিপ্রবাহের খালগুলোয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় যেভাবে পানি নামার কথা সেভাবে নামছে না।লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন,বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার পানির উচ্চতা ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। মেঘনা নদীর পানি অনেক নিচে রয়েছে। কিন্তু খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি নামতে পারছে না। বৃষ্টি না হলে এবং বন্যাকবলিত পাশের জেলা থেকে পানি না এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দি। ক্ষতির পরিমাণও ব্যাপক। বন্যাক্রান্তদের খাবারসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্তদের আরো সহায়তা দিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন তারা। তবে প্রশাসনের পাশাপাশি বিত্তবানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।বন্যার পানি কমতে থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার কবলে থাকতে হবে এ অঞ্চলের মানুষকে। খাল-বিলে প্রতিবন্ধকতা থাকায় পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে। দ্রুতই পানি নামার কোনো লক্ষণ দেখছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।

তারা বলছেন, রহমতখালী খাল, ওয়াবদা খাল, রামগঞ্জ উপজেলার বিরেন্দ্র খাল, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ডাকাতিয়া খাল হয়ে মূলত মেঘনায় প্রবাহিত হয় পানি। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে প্রভাবশালী মহলের কবলে খালগুলোর বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে যায়। তাছাড়া দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে খালগুলোর বিভিন্ন অংশে ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানা জমে পানির গতিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বন্যার পানিও এসব খাল দিয়ে নামতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এদিকে গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে খড় পচে যাচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয় এবং নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। পশু রাখার জায়গা না থাকায় কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে রেখেছেন। আবার কেউ ভবনের ছাদে রেখেছেন।জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলার ১৩ হাজার ৭০০ একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় মারা গেছে ১৮টি গরু, ৫২টি ছাগল ও ১৫টি ভেড়া, ১ লাখ ৫১ হাজার মুরগি ও ৯৭৩টি হাঁস। সব মিলিয়ে পশু সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া ২ কোটি ৮৬ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকার খড়, ৭ কোটি ৭১ হাজার ২০০ টাকার দানাদার খাদ্য, ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার ঘাস নষ্ট হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুধ রঞ্জন মিত্র বলেন, প্রথম দিকে কিছুটা ঝুঁকি ছিল। আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করেছি। আপাতত গবাদিপশুর তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। আমরা উপজেলা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি। গো-খাদ্যের কিছুটা সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় প্রত্যেক উপজেলায় ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতির তালিকা পাঠানো হয়েছে। আরো বরাদ্দ এলে চাষী ও খামারিদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram