কোটা সংস্কারের দাবিতে এবার রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকালে সাড়ে ১০টার দিকে তারা বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এতে বাড্ডা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখি সড়ক বন্ধ রয়েছে। বনশ্রী ও আবুল হোটেল হয়ে আসা গণপরিবহন দীর্ঘ জটে পড়ে। ফলে অনেকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে হাতির ঝিলকে বেছে নিচ্ছেন।
গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও কোটা সংস্কার দাবিতে তারা এ আন্দোলন করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকশত শিক্ষার্থী তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মেরুল বাড্ডায় রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন। এ সময় মেরুল বাড্ডা এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সব যানবাহনের চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের কারণে রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকে আছে। আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বাড্ডা জোনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, সকালে সাড়ে ১০টা থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে মালিবাগ-উত্তরাগামী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটনা না পারেন সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।
উল্লেখ্য, রোববার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রথমে রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ শেষে হলে ফিরে যান তারা।
একই সময়ে মধ্যরাতে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
একই ইস্যুতে গতকাল সোমবার উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান নেন কয়েকশ আন্দোলনকারী। এসময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। তবে তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলাদা অনুষ্ঠানে তাদের স্লোগানের ভাষার তীব্র সমালোচনা করেন।
এরপর ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগ। দুপুর ২টার দিকে তারা বিজয় ৭১ হলসহ বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দেন। এ খবরে আন্দোলনকারীরা ছুটে গেলে ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর থেকে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বিকেল ৪টার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠি-সোটা নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। বহু আন্দোলনকারীকে পিটিয়ে আহত করে তারা। তাদের অনেকের মাথা ফেটে যায়। আন্দোলনকারীরা কোথাও কোথাও প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ফলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালেও গেছেন কেউ কেউ।
এরপর বিকেল ৫টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সামনে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ফের সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ উপস্থিত হয়ে ব্যারিকেড দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের থামিয়ে দেন যেন তারা সামনে যেতে না পারে। ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষক ও প্রভোস্ট হলের শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের হটাতে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাবির দোয়েল চত্বর এলাকা থেকে সাঁজোয়া যান নিয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। রাত পৌনে ১০টার দিকে ক্যাম্পাস ছাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।