ঢাকা
৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:২৭
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪

চবির নতুন ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগে আলোচনায় একাধিক শিক্ষকের নাম

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একের পর এক পদত্যাগে ভেঙে পড়ে দেশের শিক্ষা প্রশাসন। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কার্যত অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও (চবি)। ভিসি থেকে শুরু করে প্রো-ভিসিসহ প্রক্টরিয়াল বডি এবং হল প্রভোস্টরাও পদত্যাগ করেছেন। তবে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি নিয়োগের কাজ শুরু করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার। ঢাকা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইতোমধ্যে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসিসহ প্রশাসনের শীর্ষ পদে কারা নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন তা নিয়ে নানা মহলে চলছে আলোচনা। তবে নিরপেক্ষতার আড়ালে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে যারা সমর্থন জানাননি বরং স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে কথা বলেছেন তাদের কোনো অধিকার নেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্ব পালন করার। আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল এবং অ্যাকাডেমিকভাবে যোগ্য এমন ব্যক্তিদের শীর্ষ পদে দেখতে চান শিক্ষার্থীরা।

গত ১৮ আগস্ট সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত সম্ভব আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। এটা একটা সুযোগও আমি মনে করবো। আমরা চাইবো, এতোগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকারের শিক্ষানুরাগী ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি আসুক। তাদের শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক যোগ্যতা থাকতে হবে। এতোদিন এই জায়গাটায় আমাদের অবমূল্যায়ন হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ১২ আগস্ট পদত্যাগ করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের। একই সময়ে পদত্যাগ করেন দুই উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে ও অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী। এরপর থেকেই পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।

শিক্ষার্থীদের শত প্রত্যাশা পূরণে আগামীর ভিসি ও প্রো-ভিসি হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নাম শুনা যাচ্ছে। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল ফোরকান, লোক প্রশাসন বিভাগের আমির মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এস.এম.মনিরুল হাসান।

আবুল হোসাইন ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে বেশ কিছু কারণে বিতর্কিত। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রগতিশীল আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সমাজ (হলুদ দলের) আহ্বায়ক। হাসিনা সরকারের আমলে উপাচার্য প্রার্থী ছিলেন অধ্যাপক আবুল হোসাইন। সেসময় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার অভিযোগ মেলে তার বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে নানা কারণে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। তিনি বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক ঐক্যের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে প্রকাশ্য সমর্থন দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের একটা অংশ তাকে ভিসি হিসেবে চাইছেন। এছাড়াও তিনি অধ্যাপকদের ভোটে নির্বাচিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা লক্ষ্য করা গেছে। ক্যাম্পাসে তিনি শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষক হিসেবে বেশ পরিচিত। নিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন সময়ে তার ব্যাপারেই অ্যাকাডেমিক দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রশংসা শোনা যায়। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলন ও মানবাধিকার প্রশ্নে তাকে বেশ জোরালো ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তাকে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। ভিসির তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক শামীম।

ভিসি হওয়ার দৌড়ে আছেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল ফোরকান। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর যুক্তরাষ্ট্রেন নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের অর্ন্তভুক্ত হলেও অভিযোগ রয়েছে কখনও সক্রিয় ছিলেন না এ শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে হলুদ দলের শিক্ষকদের সঙ্গে ছিল তার বেশ সখ্যতা। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নীরব ভূমিকায় ছিলেন তিনি।

আমির মোহাম্মদ নসরুল্লাহকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বানাতে মরিয়া আওয়ামী লবি। তিনি লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক। তাকে ভিসি বানানোর জন্য কপি পেস্ট পোস্ট করানো হচ্ছে বিভিন্ন আইডি থেকে। তাদের শিক্ষার্থীদের দিয়েও পোস্ট করানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিএনপিপন্থি প্রফেসর নছরুল কদিরের পিএইচডি ডিগ্রি না থাকার কারণে তার নাম বিবেচিত হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক পরিষদের একজন দায়িত্বশীল বলেন, নিরপেক্ষ বলে কোন শিক্ষক নেই সবাই কোন না কোন মতাদর্শের অনুসারী। সেই জায়গা থেকে স্বচ্ছতা, অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক যোগ্যতার বিচারে অবশ্যই ড.শামীম উদ্দিন খান ভিসি পদের জন্য অগ্রাধিকার যোগ্য। তিনি শিক্ষক মহলেও ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্য। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সবার আগে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন এবং শিক্ষক ঐক্য গড়ে তোলেন। তিনি ভিসি হলে নিয়োগ বাণিজ্যমুক্ত ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।

সফল গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমন ভিসি চান এমন প্রশ্নের জবাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয়সহ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব ও নিরপেক্ষ ভিসি যাই। যিনি আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেশনজট মুক্ত করবেন। আমাদের ড.মোহাম্মদ ইউনুস স্যার এ ব্যাপারে যথেষ্ট অবগত আছেন তিনি যাকে ভালো মনে করেন তাকেই ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেবেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. মো. শহিদুল হক বলেন, উপাচার্য অবশ্যই এমন কেউ হবেন যিনি দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার ঊর্ধ্বে থাকবেন। এক কথায় নিরপেক্ষ থাকবেন। তার মাঝে অবশ্যই বৈষম্যবিরোধী চেতনা রক্ত মাংসে লালন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি হয়েছে দুটি বিষয়ের জন্য। একদিকে জ্ঞান চর্চা আরেকদিকে জ্ঞান সৃষ্টি। শিক্ষকতার কাজ এবং গবেষণার কাজ এ দুটোকে যারা এগিয়ে নিতে পারবেন একই সাথে প্রশাসনিকভাবে দক্ষ, সাহসী, উদ্যোগী, উদ্যমী এরকম মানুষকেই চাই।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ সৎ, দক্ষ, মেধাবী এবং বাংলাদেশপ্রেমী অধ্যাপকবৃন্দকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য পদসমূহে বেছে নিবেন বলে সকলেই আশা করছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা ও ব্যাঘাত ঘটেছে তা দূর করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্রুতই গতিশীল হয়ে ওঠবে বলে সকলেই আশাবাদী।

বর্তমানে চবিতে সহস্রাধিক শিক্ষক রয়েছেন। তাদের সকলকে ম্যানেজ করতে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সকল মহলের নিকট গ্রহণযোগ্য ভিসি প্রয়োজন। গ্রেড-১ অথবা সিলেকশন গ্রেডের সিনিয়র অধ্যাপককে ভিসি না বানিয়ে জুনিয়র কাউকে বানালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এত বড় প্রতিষ্ঠান সকলকে নিয়ে চালানো কঠিন হয়ে পড়বে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram