ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিকীকরণ ও প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে তারা উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় তারা বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এগুলোতে লেখা ছিল- “ক্লাস শুরুর আগে সিটের ব্যবস্থা করতে হবে”, “সিট কই সিট কই হলে আমার সিট কই”, “আবাসনের চিন্তা ছাড়তে চাই”, “বৈধ সিট আমার অধিকার”, “শিক্ষার্থীদের প্রতি হলের স্টাফদের আচরণ খারাপ কেন?”
মানববন্ধনে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জান্নাতি দীপার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সুর্মী চাকমা (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ), নিখিতা (জিওলোজি), তানিম বিন কাইয়ুম (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), মেফতাহুল শৈলী (ইংরেজি), সুমাইয়া ((রাষ্ট্রবিজ্ঞান), রাশা (ভাষা বিজ্ঞান), শামিমাসহ (বাংলা) প্রমুখ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুর্মী চাকমা বলেন, ‘১ম বর্ষ থেকে বৈধ সিট পাওয়াটা আমাদের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। এটা আমাদের প্রতি কোনো দয়া না। আমরা চাই ১ম বর্ষের ভর্তির সময় থেকেই সিট দেওয়া হোক।’
জিওলোজি বিভাগের শিক্ষার্থী শারাবান তাহুরা নিখিতা বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর ধরে একটা বড় অংশ রাজনৈতিক দখলদারিত্বের কারণে সিট পায়না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হয় তাহলে রাজনৈতিক দখলদারিত্বের আর সুযোগ থাকবেনা।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী তানিম বিন কাইয়ুম বলেন, ‘হলভিত্তিক যে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম সংঘটিত হয় সেখানে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারেনা।ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকার ফলে টিএসসি ভিত্তিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে তারা সক্ষম হয়না।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেফতাহুল শৈলী বলেন, ‘আমি একজন ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে কেন আমাকে ঢাকায় এসে বাসা ভাড়া করতে হবে?কেন আমাকে ভর্তির সময় সিট বরাদ্দ দিতে পারবেনা?না পারলে কেনো হল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে?’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিমু বলেন, ‘কেউ যখন আমাকে প্রশ্ন করে তুমি কোথায় পড়? আমি তখন গর্বের সাথে বলি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বিভাগ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়ি। কিন্তু কেউ যখন জিজ্ঞেস করে তুমি কোথায় থাকো? তখন লজ্জায় আমার মুখটা চুপসে যায়। কারণ তখন আমি গর্বের সাথে বলতে পারিনা যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে থাকি।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরমানুল হক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়ায় বেশ কিছু পুলিশ ফাঁড়ি, কর্মচারি সমিতি ভবন, মার্কেটের কার্যক্রম চলমান রেখেছে।কিন্তু আবাসন সংকট নিরসনে প্রশাসনের ভূমিকা আমরা কখনও দেখতে পাইনি।’
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নুজিয়া হাসিন রাশা (ভাষাবিজ্ঞান), শামিমা (বাংলা), অনন্যা কর (সঙ্গীত বিভাগ)।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি পেশ করেন। তাদের দাবিগুলো হলো-
১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক করতে হবে।
২। ১ম বর্ষের ১ম দিন থেকেই সিট প্রদান করতে হবে।
৩। মেয়েদের হল সংখ্যা বাড়াতে হবে।
৪। নতুন হল নির্মাণের আগে অব্দি যাদের আবাসন সমস্যা আছে, ক্লাস শুরুর আগে তাদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সাত দিনের মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫। হলগুলোর সংস্কার করতে হবে।(বিল্ডিং গুলো নিরাপদ কিনা তা পরীক্ষা করা, খাবারের মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবা, লন্ড্রী সেবা, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটাইজেশান, অবকাঠামোগত সংস্কার, প্রসাশন কর্তৃক তদারকি ইত্যাদি)।
৬। মেয়েদের হলের আশেপাশে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।