দেশের ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি আওয়ামী লীগের গত সরকারের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে শেখ পরিবারের নামে। আর শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৭টিসহ মোট ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। দুইটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম রয়েছে শেখ হাসিনা ও শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিবের নামে। শিক্ষার মানের থেকে আওয়ামী লীগ সরকার অধিক গুরুত্ব দিয়েছিল নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে। যার মাধ্যমে তছরুপ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এখন প্রশ্ন উঠছে একই নামে হওয়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যত কী?
বারংবার বিশেষজ্ঞরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না করে দেশে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দিকে হেঁটেছিল আওয়ামী লীগ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো ধরনের প্রস্তুতি, সারঞ্জাম, ভবন ছাড়াই শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। যার কারণে শুরুর দিকে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা শিকার হন অবহেলার।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এগরিকালচার ইউনিভার্সিটি ছিল। এরপর নতুন করে হওয়া সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেয়া হয়- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, গোপালগঞ্জ; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ম্যারিটাইম ইউনিভার্সিটি; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইউনিভার্সিটি, কিশোরগঞ্জ; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, পিরোজপুর; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইউনিভার্সিটি নওগাঁ। এ ছাড়াও মেহেরপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেয়া হয়েছে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ক্ষমতাচ্যুৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে হয় দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো- শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি ও শেখ হাসিনা মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, খুলনা। এ ছাড়াও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেয়া হয় শেখ হাসিনার মায়ের নামে- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, সিলেট; বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়াও শেখ কামালের নামে ২০২২ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর চালু করা হয়।
কিন্তু শেখ পরিবারের নামে কেন এত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম? জানা যায় শেখ হাসিনার সময়ে শিক্ষার দায়িত্বে থাকা সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির সময়ে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পাস হয়। এ সময় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নাম শেখ পরিবারের নামে দেয়া হতো। যাতে অতি সহজে প্রকল্প পাস হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে একজন কমকর্তা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প আসলে সেটার নাম ও আনুষঙ্গিক নিয়ে কোনো কথা বলার সাহস কেউ দেখাতো না। তারা প্রচার করতো, এটা শেখ হাসিনার নিজের প্রকল্প। একই নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে নাম বিভ্রাট দেখা দেয়ার শঙ্কার পরও কোনো আপত্তি তোলা হয়নি। দীপু মনির তৈরি একটা সিন্ডিকেট এই প্রকল্পগুলো নিয়ে আসতেন। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য নামের ক্ষেত্রে আপত্তি বা কোনো প্রস্তাবনা দেয়া হলেও শেখ পরিবারের নামের ক্ষেত্রে কেউ কোনো আপত্তি তুলতো না। এই সুযোগটাই নিয়েছিল এই সিন্ডিকেট।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একবার নাম দেয়া হয়ে গেলে পরিবর্তনে নানা জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে পাস করা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট জটিলতা তৈরি হয়। এ কারণে পূর্বে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের আবেদন থাকা সত্ত্বেও সে পথে হাঁটেনি ইউজিসি।
এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফয়েজ একই নামে এত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেন, এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দায়িত্ব নেবার পর থেকেই শুনছি। এটি কীভাবে হলো সেটি নিয়ে কাজ চলছে। কী নাম প্রস্তাবে ছিল কেন শেখ পরিবারের নাম ব্যবহার করা হলো আমরা বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। আমাদের নানা ধরনের সংস্কারের মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে। এখনো ইউজিসি সকল সদস্য যোগ দেননি। পরবর্তীতে এই নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আমরা ভেবে দেখবো। আর নাম পরিবর্তনের এখতিয়ার ইউজিসির নয়। ইউজিসি সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারে।