ঢাবি প্রতিনিধি: ছাত্রশিবির একটি আদর্শিক সংগঠন এবং ছাত্রশিবিরকে বাংলাদেশের প্রচলিত মূলধারার অন্যান্য রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের ফ্রেমওয়ার্কে ডিফাইন করলে ভুল হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ফেসবুক স্টাটাসে এ মন্তব্য করেন তিনি। পাঠকদের জন্য তার স্টাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো–
❝বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বাংলাদেশের প্রচলিত মূলধারার অন্যান্য রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের ফ্রেমওয়ার্কে ডিফাইন করলে ভুল হবে। ছাত্রশিবির একটি আদর্শিক সংগঠন। এখানে মাঠে ময়দানে শক্তি প্রদর্শন কিংবা কারো ভ্যানগার্ড হওয়ার কোনো চর্চা নেই। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের জায়গায় আদর্শিক বোঝাপড়া সম্পর্কে সচেতন ও পরিষ্কার দখল থাকা ছাত্রশিবিরের দ্বায়িত্বশীল-জনশক্তিদের জন্য জরুরি। আর এই পথটা কোনো নেতার পিছনে বানোয়াট ও প্রদর্শনমূলক ‘সহমত ভাই’ ধরনের স্লোগান দেওয়া না। ‘সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক’ গঠনের যে প্রকল্প তার প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘমেয়াদি, এবং এর ফলাফলও সুদূরপ্রসারী।
একজন জনশক্তি থেকে স্রেফ পলিটিক্যাল বেনিফিট নেওয়া কোনো আদর্শভিত্তিক সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হতে পারে না। ব্যক্তিগত নৈতিকতার পরিচর্যা করে জাতীয় দায়ভার বিশ্বস্ততার সাথে পালন করার উপযুক্ত মানুষ তৈরির ট্রেনিং সেন্টার আমাদের সংগঠন। সংখ্যাতাত্ত্বিক মানোন্নয়নের চেয়ে গুণগত মানোন্নয়ন তথা জ্ঞানগত ও চারিত্রিক (নৈতিক ও আধ্যাত্মিক) উন্নয়নই আমাদের প্রধান প্রায়োরিটি। রাজনৈতিক সচেতনতা ছাত্রশিবিরের অনেকগুলো কাজের মধ্যে একটি। একমাত্র, বা মূল কাজ নয়।
প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় টিকে থাকার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য ইসলামী ছাত্রশিবিরের রয়েছে নানা আয়োজন। নির্দিষ্ট কোন স্কুল অফ থ্যট নয়, বৈচিত্র্যময় জ্ঞানের জন্য রয়েছে পড়াশোনা। এখানে নানা মতের, নানা রুচির, নানা ব্যাকগ্রাউন্ডের, নানান ধরণের স্বপ্নের ছাত্ররা রয়েছে। শৈশব থেকে যুবক বয়স পর্যন্ত, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ছাত্রদের রুচি, চরিত্র ও সৃজনশীলতার বিকাশে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা থাকে। সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অন্যান্য মননশীল সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমেও রয়েছে আমাদের তাগিদ— একাডেমিক পরিধির বাইরে গিয়ে বিস্তৃত জগতের সাথে যেন হয় জানাপরিচিতি। আর সেই যাত্রাটা হঠাৎ করে শুরু হয় না। মৌলিক ভিত্তি গড়ার সময় থেকেই শুরু হয় মহৎ জীবনের প্রশিক্ষণ।
আমরা কখনোই শুদ্ধতার মানদণ্ড নই। ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়েই আমাদের সংগঠন। ঐতিহাসিক ও বর্তমান অবস্থানের দরুণ আমাদের প্রতি আপনাদের প্রত্যাশার জায়গাটাও বিশাল। সেজন্য জনপরিসরে প্রায়ই সমালোচনা হাজির করেন। আমরা তা ইতিবাচকভাবেই দেখি। আপনাদের গঠনমূলক সমালোচনাকে সর্বদাই পর্যালোচনা করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় আমলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চব্বিশের স্বাধীনতা উত্তর আমাদের প্রতি আপনাদের 'রাষ্ট্রীয় সংস্কারকেন্দ্রিক' প্রত্যাশা কয়েকগুণ বেড়েছে— আল্লাহ আমাদের সকল ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক কাজের আঞ্জাম দেওয়ার তৌফিক দিক। আমিন।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ, আজাদী জিন্দাবাদ।❞