প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরের মধ্যে মাত্র চারটি সমাবর্তনের কারণে পড়াশোনা শেষ হলেও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কয়েক হাজার ডিগ্রিধারী, যাদের পেশাজীবনে গিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়।
দেশের দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে পুরোনো এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বহু ঐতিহ্য ও ঘটনার সাক্ষী হয়ে ২২ নভেম্বর ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে। এই পরিস্থিতি ভিন্ন আঙ্গিকে হলেও সংকট উত্তরণে নতুন চিন্তাও করছে ইসি প্রশাসন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, সমাবর্তন নিয়মিত করার ক্ষেত্রে অনুষদভিত্তিক সেটি আয়োজনের বিষয়ে ভাবছেন তারা।
১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরের যাত্রা শুরু হয়।
তবে প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরের মাত্র চারটি সমাবর্তন হওয়া এবং সর্বশেষ ছয় বছরে কোনো সমাবর্তন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সমাবর্তন আয়োজনের দাবি তুলেছেন তারা।
২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে প্রথম, ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২৮ মার্চ ২০০২ সালে তৃতীয় ও সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে চতুর্থ সমাবর্তন হয় ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের।
১৭৫ একরের এই বিদ্যাপীঠের প্রায় ১২ হাজার স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী পঞ্চম সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় বারো হাজার শিক্ষার্থী।
এদিকে নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় মিলছে না শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। মূল সনদপত্রের পরিবর্তে সাময়িক সনদপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হচ্ছে অনেককে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সমাবর্তনে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা মূল সনদপত্র হাতে পান। চতুর্থ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ বর্ষ পর্যন্ত স্নাতক এবং ২০১৪-১৫ বর্ষ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর এবং ২৩৬তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন প্রাপ্ত এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অংশ নেন।
বর্তমানে ২০১৭-১৮ বর্ষের অধিকাংশ বিভাগের স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিভাগের স্নাতকোত্তরও সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকটি বর্ষের এমফিল ও পিএইচডি গবেষকরা নিয়েছেন তাদের ডিগ্রি। তবে তাদের কেউই পাননি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দা'ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, “সমাবর্তন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য, যা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পরিশ্রমের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করে।”
“এটি শুধু অর্জনের উদযাপন নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণার উৎস। ছয় বছরে সমাবর্তন না হওয়া হতাশাজনক; এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গৌরবের অংশ।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ এর পরিচালক ও দা'ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ইকবাল হোছাইন বলেন, “সমাবর্তন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কাঙ্ক্ষিত একটি উপলক্ষ। এতে শিক্ষার্থীরা যে গাউন পরে; এর মাধ্যমে নিজেদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।
“বহির্বিশ্বে মূলত অনুষদভিত্তিক সমাবর্তন আয়োজন করার ফলে নিয়মিতই তা করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে ভিন্ন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি অনুষদভিত্তিক এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিতে পারেন, তাহলে সমাবর্তন যথাযথভাবেই আয়োজন করা সম্ভব।”
উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ বলছেন, “সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার। এটা আমাদের ভাবনায় রয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সমাবর্তন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার হয়। এতে সময়ক্ষেপণ হয়।”
“সমাবর্তন নিয়মিত আয়োজনের লক্ষ্যে অনুষদভিত্তিক সেটি করার বিষয়ে ভাবছি আমরা। এ বিষয়ে ডিনদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”