ঢাকা
৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:৫৮
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ২৪, ২০২৪

পাঠ্যবইয়ে আসছে একগুচ্ছ পরিবর্তন, স্বাধীনতার ঘোষক হয়ে ফিরছেন জিয়াউর রহমান

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটেছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাঠ্যবইয়ে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই আগামী শিক্ষা বর্ষে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়েও আসছে একগুচ্ছ পরিবর্তন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এরই মধ্যে পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজ শেষ করেছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের পাঠ্যবইয়ে যোগ হচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের গল্প। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ফিরছেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু পরিবারের যেসব অতিরঞ্জিত ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হয়েছিল, তা বাদ যাচ্ছে।

এমনকি তাকে নিয়ে রচিত কবিতাও বাদ যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে যে উপাধি দেওয়া হতো তা বাদ যাচ্ছে। তবে তিনি যখন থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধি পেয়েছিলেন তখন থেকে সেই উপাধি থেকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মওলানা ভাসানী ও জাতীয় চার নেতার অবদান পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে।

পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেসব ছবি ও উদ্ধৃতি রয়েছে সেগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে। এর বদলে ঢাকা শহরের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের দেশের মূল্যবোধ, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু পাঠ্যবইয়ে থাকছে না। ফলে অনেক ছবিতে পরিবর্তন আসছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বা ইতিহাসে যার যা ভূমিকা তা আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে।

২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের গল্পও যোগ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে যে গ্রাফিতি এঁকেছিল তা আমরা বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে যুক্ত করেছি। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের পরিমার্জন শেষ করেছি। বই ছাপাও শুরু হয়ে গেছে।’

অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান আরো বলেন, ‘এ বছর আমাদের হাতে সময় খুবই কম ছিল। আমাদের পরিমার্জনের কাজগুলো খুবই দ্রুত করতে হয়েছে। ২০২৫ সালের বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার পর আমরা বেশ কিছু মতামত পাব। ২০২৬ সালের বইতে আমরা পরিমার্জনের কাজগুলো আরো ভালোভাবে করার চেষ্টা করব।’

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ শহীদ হন। পুলিশের গুলির বিপরীতে বুক পেতে দাঁড়িয়ে যান তিনি। পরে তিনি ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। এ ছাড়া গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় শহীদ হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তার বলা ‘পানি লাগবে, পানি; পানি লাগবে, পানি’—এ উক্তি পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের প্রধান স্লোগানে পরিণত হয়।

আগামী শিক্ষাবর্ষের পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির বইয়ে নতুন একটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী-জনতার গল্প নিয়ে এই অধ্যায়টি করা হয়েছে। এতে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের গল্প ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ফিরছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। বইতে উল্লেখ করা হয়েছে-২৬ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট (তৎকালীন মেজর) প্রথমবার নিজেই চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরের দিন ২৭ মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে পুনরায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বলে উল্লেখ করা হয়। অথচ বর্তমান পাঠ্যবইয়ে শুধু ২৭ মার্চের ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ ছিল।

বর্তমান পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব উপাধি বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত হিসেবে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং জাতীয় চার নেতার অবদান তুলে ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইতে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘খোকাবাবু’ নামে একটি কবিতা ছিল, তা বাদ দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইতে শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্য শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ জামাল, শেখ কামাল, শেখ রাসেলকে নিয়ে অতিরঞ্জিত ইতিহাস লেখা হয়েছিল। সেগুলোও আগামী শিক্ষাবর্ষের বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে জুলাই ২০২৪ এর ওপর একটি কবিতা যুক্ত করা হয়েছে। দেশের মূল্যবোধ, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু ২০২৫ সালের পাঠ্যবইয়ে থাকছে না। মাদরাসার বইতে অনেক ছবিতে পরিবর্তন আসছে।

পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেসব ছবি ও উদ্ধৃতি রয়েছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে রাজধানীসহ সারা দেশের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে।

এসব গ্রাফিতিতে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময়টুকুকে ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অভ্যুত্থানে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাফিতিতে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রাষ্ট্র-সমাজের সংস্কার, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, বাকস্বাধীনতা, অধিকার নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে সব ধরনের অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর প্রতিরোধের উক্তিও ফুটে উঠেছে এসব গ্রাফিতিতে।

আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রথম শ্রেণির বাংলা বইতে দেখা যায়, পেছনের প্রচ্ছদে যে গ্রাফিতিটি ব্যবহার করা হয়েছে তাতে লেখা আছে—‘মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন’। আর উক্তিটিতে বলা হয়েছে—‘বড়োদের সম্মান করো’। ইংরেজি বইয়ের গ্রাফিতিতে লেখা—‘হ্যাপি ন্যাশন’ আর উক্তিতে বলা হয়েছে—‘ইউনিটি ইজ স্ট্রেনথ’। গণিত বইয়ের উক্তিতে আছে—‘সদা সত্য কথা বলবে’। আর সামাজিক সমস্যা এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিকারের হেল্প সেন্টারের নম্বর দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের গ্রাফিতিতে আছে—‘ভালো মানুষ ভালো দেশ স্বর্গভূমি বাংলাদেশ’। আর উক্তিতে বলা হয়েছে—‘পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি’। ইংরেজি বইয়ের গ্রাফিতিতে আছে—‘পিপলস ইজ পাওয়ার’ ও উক্তিতে বলা হয়েছে—‘ডু নট টেল এ লাই’। এভাবে প্রতিটি শ্রেণির প্রতিটি বইতে নতুন নতুন গ্রাফিতি ও উক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram