ঢাকা
৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১১:২০
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ৫, ২০২৪

মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা বহাল রেখেই ঢাবির ভর্তি কার্যক্রম শুরু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুটা ছিল কোটা সংস্কার ঘিরে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-নাতি-নাতনিদের জন্য বরাদ্দ করা ৩০ শতাংশ কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। জুলাইতে শুরু হওয়া সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আগস্টের ৫ তারিখে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অথচ অভ্যুত্থানের তিন মাস না পেরোতেই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা বহাল রেখে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই ভর্তি প্রক্রিয়া জুলাই বিপ্লবের চেতনাবিরোধী বলে মনে করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

ঢাবির ২০২৪-২৫ সেশনে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য মোট ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সময়ের স্বল্পতার জন্য এই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির বৈঠক হয়। পরে সার্বিক বিষয়ে ২৭ অক্টোবর একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক হয়। এসময় কোটা সংস্কার নিয়ে কথা বলেন অধিকাংশ সদস্য।

সময়ের ‘স্বল্পতা’ দেখিয়ে এবারও গত সেশনের মতো ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ।

তবে সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনই কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে আইন অনুষদের ডিনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

সোমবার (৪ নভেম্বর) অনলাইনে ভর্তির আবেদন ও ভর্তি ফি জমা দেওয়া শুরু হলেও রোববার (৩ নভেম্বর) পর্যন্ত কমিটি গঠনের কোনো লিখিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।

ফলে এ কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের ৫ শতাংশ কোটা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের অনলাইন আবেদন গ্রহণ ও ফি জমা দেওয়া শুরু হয়েছে সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টায়। এ প্রক্রিয়া শেষ হবে ২৫ নভেম্বর রাত ১১:৫৯ মিনিটে।

আবেদন প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আবেদনের পঞ্চম ধাপে আবেদনকারী পরবর্তী পাতায় প্রদর্শিত ছবি-৫ এ অনুরূপ ফরমে তার পরীক্ষা কেন্দ্রের বিভাগীয় শহর বেছে নেবে এবং শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কোটার তথ্য জানাবে।

আবেদনকারী শিক্ষার্থী যদি কোটার জন্য নির্ধারিত আসনে আবেদন করতে চায় তবে প্রযোজ্য কোটার ঘরে ক্লিক করে নিচের কাজ করবে- ‘এক্ষেত্রে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নম্বর দেবে ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ আপলোড করবে।’

অন্যদিকে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার পরের ধাপের বিজ্ঞপ্তিতে কোটা অংশের ‘ঙ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান (সন্তান পাওয়া না গেলে নাতি/নাতনি) কোটার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যু করা সনদপত্র অথবা ১৯৯৭ সন থেকে ২০০১ সন পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অধীনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রসহ আবেদন করতে হবে।’

‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান (সন্তান পাওয়া না গেলে নাতি/নাতনি) কোটায় ভর্তি প্রার্থীদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ সঠিক কি না তা সংশ্লিষ্ট ইউনিট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই করার পর ভর্তির অনুমতি প্রদান করবে।

উপাচার্য মহোদয়ের সভাপতিত্বে ডিনগণের সভায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের মধ্যে বিষয় বণ্টন করা হবে। কোটায় ভর্তি প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের ৭ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ডিন অফিস থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদর্শনপূর্বক নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করতে হবে।’

বিষয়টি সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদনও করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এবিএম শহিদুল ইসলাম।

তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ২৭ অক্টোবর কোটা সংস্কার করতে কমিটি করলেও এই কমিটির সদস্যরা লিখিত বিজ্ঞপ্তি পায়নি। আমাকে সদস্য করা হলেও আমি সোমবার সেটা জানতে পারি। ফলে কমিটির কোনো বৈঠক ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে না। সেজন্য তাদের ভাতা দেওয়া হয়েছে। সন্তানদের চাকরির কোটা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাই বলে নাতি-নাতনিদের কোটা দিতে হবে?

একজন গ্রামের ছেলে চান্স পাচ্ছে না তাদের কোটার জন্য। তাই এই কোটা অবশ্যই বাতিল করা জরুরি। না হলে আবু সাঈদসহ হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।

প্রতি বছরের ন্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারও ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ শতাংশ, ওয়ার্ড/পৌষ্য কোটায় ১ শতাংশ, উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায়, হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় কোটায় ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী (দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ, শারীরিক, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার্স/হিজড়া) কোটায় ১ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে। তাছাড়া গত বছর খেলোয়াড় কোটায় ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় বিশ্ববিদ্যালয়, যা এবারও বহাল থাকবে।

তবে অন্য কোটায় কারো দ্বিমত না থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান তারিক বলেন, আমরা কিছুদিন আগেই কোটার বিপক্ষে আন্দোলন করলাম। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দাবি না মেনে আমাদের ওপর গুলি চালিয়ে হাজারো ছাত্র-জনতাকে শহীদ করল।

এর তিন মাস না যেতেই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ এখান থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল।

প্রশাসনে মাথায় রাখা উচিত অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে যেন কখনো অবহেলা করা না হয়। অবিলম্বে যেন এই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, জুলাই মাসের শুরুতে আমাদের আন্দোলন ছিল কোটার বিরুদ্ধে, যেখানে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের ৩০ শতাংশসহ ৫৬ শতাংশ কোটা দেওয়া হয়েছিল।

এটা ছিল মেধাবীদের সঙ্গে প্রহসন। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে একপর্যায়ে স্বৈরাচার হাসিনার পদত্যাগ করিয়েছি। এখন জানতে পারলাম ঢাবি নাকি মেধাবীদের রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের ৫ শতাংশ কোটায় ভর্তি করাবে।

তিনি বলেন, যেখানে আমরা ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি সেখানে তারাই বৈষম্য করতে চাইছে। প্রশাসনের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না এর ফল খারাপ হতে পারে। আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, অতি দ্রুত যেন এই কোটা বাতিল করে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে জোরেশোরেই আলোচনা হয়েছে। সেদিনই একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু সময়ের স্বল্পতা ছিল এ বছর, তাই আগে করা হয়নি। তবে এটা আগামী মিটিংয়ের পরে রিভিউ হতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, এটা একাডেমিক বিষয়, তাই এই বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ভালো বলতে পারবেন।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, আমি কিছু বলতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) স্পোকস পারসন হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত এটা, তাই তিনিই বলবেন।

পরে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সায়মা হক বিদিশাকে ড. মামুন আহমেদের মন্তব্য জানিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram