ঢাকা
৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:৪২
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ৩০, ২০২৪

৪০ এর মধ্যে এখনো ৩৫ কোটি বই-ই ছাপানো বাকি

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর মাত্র এক মাস বাকি। অথচ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মোট সাত শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ এখনো শুরুই হয়নি। কেবল প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি বই ছাপানোর কাজ চলছে। বাকি শ্রেণিগুলোর বইয়ের পাণ্ডুলিপি ও দরপত্র প্রক্রিয়ার কাজও শেষ করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। দরপত্র অনুযায়ী মুদ্রণকারীদের এসব বই ছাপার জন্য ৫০ দিন সময় দিতে হবে। এবার স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটি বিনামূল্যের বই ছাপানোর কথা রয়েছে। এখনো কয়েকটি শ্রেণির বইয়ের সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত বছরের এ সময় নতুন শিক্ষাবর্ষের সব বই ছাপানো শেষ হয়ে থাকে। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নতুন শিক্ষাবর্ষের বই তৈরির কার্যক্রম শুরু হয় জুন-জুলাই থেকে। এবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে তিন মাস দেরিতে শুরু হয় এই কার্যক্রম। সামনে যে এক মাস আছে, এর মধ্যে ৩৫ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপানোর সক্ষমতা দেশের মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের নেই। এছাড়া এ সময়ে চাহিদামতো মানের এত কাগজ পাওয়া নিয়েও সংকট হতে পারে। সম্প্রতি প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ের পাণ্ডুলিপি দেওয়া হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানকে। এসব শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ চলছে। চতুর্থ থেকে দশম-সাত শ্রেণির বই ছাপানো এখনো শুরু হয়নি। ফলে ১ জানুয়ারির আগে সব বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ দ্রুত শুরু হয়ে যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রাথমিক পর্যায়ের বই ছাপানোর কাজ শেষ হবে। মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ের দরপত্রের কাজ শেষ হয়েছে। সেগুলো ছাপানোর কাজও শুরু হয়ে যাবে। তবে নবম শ্রেণির বইয়ের দরপত্র প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। আগামী মাসে সেটিও শুরু হবে। এছাড়া দশম শ্রেণির এক কোটি বই ছাপনোর কাজ পেয়েছে সেনাবাহিনী। যথাসময়ে এ কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সব শ্রেণির সব বই দেওয়া সম্ভব না হলেও শিক্ষার্থীদের কিছু বই দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষের নতুন বইয়ের কাগজের ওজন ৭০ গ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৮০ গ্রাম করা হয়েছে। আর উজ্জ্বলতা ৮০ থেকে করা হয়েছে ৮৫ শতাংশ। বিগত সরকারের আমলে এনসিটিবির কিছু অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে নিম্নমানের মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপানোর কাজ দেওয়া হয়েছিল।

এবার চুক্তি অনুযায়ী বইয়ের মান ঠিক থাকবে কি না জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, বইয়ের কাগজের মান নিয়ে আমরা সচেতন। কোনো মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বই ছাপানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনসিটিবি কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৯৬৪ লটে ছাপা হবে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। এর মধ্যে প্রাথমিকের ২ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫ বই।

অন্যদিকে মাধ্যমিকের ২ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এর মধ্যে ইবতেদায়ি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বইও যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ব্রেইল বই রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার। নতুন কারিকুলামে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষে ২০১২ সালের সৃজনশীল কারিকুলামের বই দেওয়া হবে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজে দেরি, নতুন কনটেন্ট যুক্ত হওয়া, বইয়ের কাভারে ব্যবহারের জন্য গ্রাফিতি নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মাধ্যমিকের সব বই ছাপার কাজ শেষ হচ্ছে না। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা যাতে কিছু বই হাতে পায়, সেই চেষ্টা করছে এনসিটিবি। সেজন্য ষষ্ঠ থেকে দশম পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণির কিছু প্রয়োজনীয় বই আগে ছাপানোর চেষ্টা করছে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ২৩ দিনের মাথায় নতুন শিক্ষাক্রম বা জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে ২০২৬ সাল থেকে তা পরিপূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে। এর আগে ২০২৫ সালে শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১২ সালের প্রণীত সৃজনশীল কারিকুলাম ধাঁচের পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। এতে পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন ও সংশোধন করে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আর নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে বিভাগ বিভাজন। এতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ আবার চালু হওয়ায় বাড়ছে বইয়ের সংখ্যাও। এর ফলে বইয়ের ফর্মার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ছাপাতেও সময় বেশি লাগবে।

বাংলাদেশ মুদ্রণ সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, প্রাথমিকের বই ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপানো গেলেও মাধ্যমিকের বই সম্ভব নয়। সম্প্রতি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অষ্টম ও দশম শ্রেণির দরপত্র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাই বছরের শুরুতেই সব বই ছাপানো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ মুদ্রণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, এনসিটিবির সব বই ছাপনো শেষ করতে মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram