হুমায়ুন কবীর রিন্টু, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে উত্তাল ও উত্তেজনা এবং আতংক বিরাজ করছে। মঙ্গলবার (৬ আগষ্ট) সকালে শহরে খুব বেশি মানুষ দেখা যায়নি। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাজারে আসছেন না। সবার মধ্যে কেমন যেন একটা ভীতি কাজ করছে। যারা বাইরে এসেছেন তাদের চোখে মুখে আতংকের ছাপ। অধিকাংশ মানুষ অজানা আতংকে ভুগছেন। স্বস্তিতে নেই কেউ। কে যেন কখন কার উপর হামলা করে, সেই আতংকে আছেন অধিকাংশ মানুষ।
মঙ্গলবার (৬ আগষ্ট) সকালে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার (৫ আগষ্ট) দুপুরে দেয়া আগুনে পুড়ছে সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু‘র বাড়ি। পোড়া গন্ধে ও আগুনের তাপে বাড়ি প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
সোমবার (৫ আগষ্ট) দুপুরে শেখ হাসিনা‘র পদত্যাগের খবরে উত্তাল হয়ে উঠে নড়াইল। ছাত্র জনতা ও আওয়ামলীগ বিরোধী জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। নড়াইল মিছিলের শহরে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু‘র বাড়ি, নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্তজা‘র বাড়ি ভাংচুর করে ও পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা, কলাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট মাহামুদুল হাসান কায়েস, হবখালি ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, জেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক আলহাজ্জ্ব ওয়াহিদুজ্জামান এর বাড়ি সহ অন্তত ৫০ টি বাড়ি ভাংচুর করে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস‘র ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার পুড়িয়ে দেয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু‘র বাড়িতে থাকা তার ব্যক্তিগত জিপ ও মাইক্রো পুড়িয়ে দেয়া হয়। প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে তার বাড়িটি পুড়তে থাকে। এ সময় একটি সুযোগ সন্ধানি চক্র নিলু খান‘র বাড়ি হতে মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। নিলু খানের লাইসেন্স করা অস্ত্র, স্বর্নালংকার, নগদ টাকা, কাপড়, খাট, পালং, বিছানার চাদর, জানালার পর্দা, থালা বাসন ও মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। রান্না করে খাওয়ার মত কোন কিছু রেখে যায়নি। নড়াইল শহর সহ বিভিন্ন গ্রামে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ও নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি‘র বিরূদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান সহ বিক্ষোভ মিছিল হয়।
তবে বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সময় এসব বাড়িতে কেউ ছিলেন না। কেউ কেউ আগেই বাড়ি হতে মূল্যবান মালামাল সরিয়ে ফেলেছিলেন। পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদে চলে গেছেন। যারা আগেই মালামাল নিয়ে সটকে পড়েছেন তারা কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
১৯৭১ সালের পর হতে অধিকাংশ সাধারণ নির্বাচনে নড়াইলের ২টি আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দল হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দুর্দান্ত দাপটের সাথেই ছিলেন এখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তবে সোমবার (৫ আগষ্ট) দুপুরে শেখ হাসিনা‘র পদত্যাগের খবরের পর আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিরাপদে পালিয়ে থাকায় বিক্ষুব্ধরা বীরদর্পে ভাংচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগ করে। এদিকে আওয়ামী লীগের অত্যাচার নির্যাতনে হামলা মামলায় দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। কার্যত: সোমবার দুপুরের পর হতে নড়াইল বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের দখলে রয়েছে।